শব্দ দূষণ প্রজেক্ট সম্পর্কে নিচে সুন্দর ভাবে আলোচনা করা হল এবং শেষে PDF দেওয়া হল।
ভূমিকা
অবাঞ্ছিত শব্দ মানুষের মধ্যে অস্বস্তির সৃষ্টি করে। সে কারণে কোলাহল বা অতিরিক্ত অবাঞ্ছিত শব্দ, দূষণের পর্যায়ে পড়ে। প্রতিনিয়ত শব্দ দূষণের মাত্রা বেড়ে চলেছে যার ফলস্বরূপ মানব জীবনের ওপর প্রভাব ফেলছে।
শব্দদূষণ কাকে বলে?
মানুষের সহন ক্ষমতা বা শ্রুতিসীমার অতিরিক্ত তীব্র, তীক্ষ্ণ, অবাঞ্ছিত, কর্কশ এবং বেসুরের অস্বস্তিকর শব্দকে শব্দদূষণ বা নয়েজ পলিউসন (Noise pollution) বলে। এর ফলে মানুষের শরীরে নানাধরনের রোগ সৃষ্টি হয়। যেমন, মানুষ বধির হয়ে যায়। রক্তচাপ বাড়ে। হৃদপিণ্ড ও ফুসফুসের গোলযোগ দেখা দেয় ইত্যাদি।
নয়েজ বা কোলাহলের উৎসগুলি
নয়েজ(noise) বা কোলাহলের প্রধান উৎস হল কলকারখানা বা শিল্প, পরিবহন, ঘর-গৃহস্থালি ও অন্যান্য প্রতিকূল পারিপার্শ্বিক পরিবেশ।
শব্দদূষণের কারণ
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানুষ নিজেই শব্দদূষণের জন্য দায়ী।শব্দদূষণের দুটি প্রধান কারণ আছে, যেমন —
(১)প্রাকৃতিক কারণ, যেমন— বাজপড়ার শব্দ।
(২)মানুষের তৈরি কারণ, যেমন — যান চলাচলের তীব্র শব্দ, ট্রেনের হুইল, গাড়ির হর্ন, মাইকের শব্দ, জেনারেটর চলার শব্দ, কলকারখানার মেশিন চলার শব্দ, সাইরেন, আতসবাজির শব্দ, সুপারসনিক জেট বিমানের শব্দ, মিটিং-মিছিলে বহু লোকের একসঙ্গে কথা বলার শব্দ ইত্যাদি।
শব্দ পরিমাপ করার এককগুলি
(১)শব্দের তীব্রতার (sound intensity) SI একক হল ওয়াট প্রতি বর্গমিটারে (Watt per square meter অর্থাৎ ereffe W/m2),
(২)শব্দের চাপের (sound pressure) SI একক হল পাসকাল (Pascal অর্থাৎ Pa),
(৩)শব্দের পুনঃপুনতা-র (sound frequency) একক হল হার্জ,
শব্দদূষণের প্রভাব
শব্দদূষণের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ প্রভাব মানুষের পক্ষে একদম ভালো নয়। শব্দদূষণের প্রভাবে মানুষের শরীরে এবং মানসিক অবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হয়। যেমন–
(১)মানুষের শরীরে অস্বস্তি হয় (শব্দের মাত্রা ৯০ ডেসিবেলের বেশি হলে)।
(২)মানসিক অবসাদ আসে (শব্দের মাত্রা ১০০-১১০ ডেসিবেল হলে)।
(৩)শব্দের মাত্রা আরও বাড়লে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায় এবং অকারণে বিরক্তি আসে।
(৪)শ্রবণেন্দ্রিয় খারাপ হয় এবং শ্রবণে বাধার সৃষ্টি হয়, কান বধির হয়ে যায়।
(৫)শ্বাস-প্রশ্বাসের হার অস্বাভাবিক হয়।
৬)স্মৃতিশক্তি কমে যায়।
(৭) ঘুম কমে যায়।
(৮)মাথা ঝিমঝিম করে, বমিভাব আসে, স্নায়ু উত্তেজিত হয়।
(৯)হৃদপিণ্ডের স্পন্দন বাড়ে বা কমে।
(১০)রাতকানা রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে এবং রং চেনার ক্ষমতা কমে যায়।
শব্দ ও কোলাহল পরিমাপ করার জন্য ব্যবহৃত যন্ত্র
শব্দ ও কোলাহল পরিমাপ করার জন্য সাধারণত যে সমস্ত যন্ত্র ব্যবহার করা হয় সেগুলি হল – (১)সাউন্ড লেভেল মিটার, (২)SPL মিটার,
(৩)dB মিটার (ডেসিবেল মিটার), (৪) নয়েজ ডোসিমিটার (Noise Dosimeter),
(৫)ফ্রিকোয়েন্সি অ্যানালাইজার (Frequency Analyzer), (৬) ম্যাগনেটিক টেপ রেকর্ডার (Magnetic Tape Recorder) ইত্যাদি।
জল দূষণ প্রজেক্ট pdf
শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ করার উপায়
শব্দদূষণ তিনভাবে প্রতিরোধ বা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যেমন – (১)প্রযুক্তিগত উপায়ে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ (২)আইনগত উপায়ে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ (৩)ব্যক্তিগত এবং জনশিক্ষার মাধ্যমে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ।
(১)প্রযুক্তিগত উপায়ে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ
(১)কারখানা বা শিল্পসংস্থায় কর্কশ শব্দ উৎপাদনকারী যন্ত্রপাতির প্রযুক্তিগত উন্নতি ঘটিয়ে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। একে উৎসস্থলের (at source) শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বলে।
(২) যে সমস্ত যন্ত্রপাতি থেকে অবাঞ্ছিত শব্দ তৈরি হয় সেই ধরনের যন্ত্রপাতির ওপর শব্দ প্রতিরোধ আচ্ছাদন ব্যবহার করেও শব্দদূষণ প্রতিরোধ করা যায়।
(৩)যে সমস্ত জায়গায় ৮০ dB (ডেসিবেল)-এর বেশি শব্দ সৃষ্টি হয় সেখানে অবাঞ্ছিত শব্দ প্রতিরোধ করার জন্য ইয়ার প্লাগ (Ear Plug), ক্যানাল ক্যাপ (Canal Cap), ইয়ার মাফ (Ear Muff) ব্যবহার করা দরকার।
(৪)যে সমস্ত কলকারখানায় প্রচণ্ড শব্দ হয় সেখানে শব্দদূষণ প্রতিরোধ করার জন্য শব্দ প্রতিরোধী এলাকা (Acoustic Zone) তৈরি করার প্রয়োজন হয়।
(২)আইনগত উপায়ে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ
হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আদালত এবং দরকারমতো অন্যান্য এলাকাগুলিতে অবাঞ্ছিত শব্দ আইন করে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যেমন –
(১)শিল্পাঞ্চলে শব্দের মাত্রা ৭৫ ডেসিবেলের কম থাকবে।
(২)বাণিজ্যিক অঞ্চলে শব্দের মাত্রা ৬৫ ডেসিবেলের কম থাকবে।
(৩)বসতি অঞ্চলে শব্দের মাত্রা ৫৫ ডেসিবেলের কম থাকবে।
(৪) হাসপাতাল, আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির ১০০ মিটারের মধ্যে কোনো ধরনের অবাঞ্ছিত শব্দ করা যাবে না। জিন অনুসারে একে নিঃশব্দ অঞ্চল বা সাইলেন্স জোন (Silence Zone) বলে।
(৫)রাত্রি ১০টা থেকে সকাল ৬টার মধ্যে বিশেষ অনুমতি ছাড়া খোলা জায়গায় জোরে লাউড স্পিকার (পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেম) চালানো যাবে না।
(৩)ব্যক্তিগত এবং জনশিক্ষার মাধ্যমে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ।
ব্যক্তিগত উপায়ে নানাভাবে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়, যেমন —
(১)স্কুটার, মোটর সাইকেল, মোটরগাড়ি প্রভৃতি যানবাহন চালানোর সময়ে অযথা হর্ন দেওয়া বন্ধ করলে শব্দদূষণ কমে।
(২)রাস্তার দু-পাশে গাছপালা লাগিয়ে শব্দদূষণ মুক্ত এলাকা গড়ে তোলা যায়।
(৩)আতসবাজি পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ করা হলে তীব্র শব্দ করা বোমা, পটকা ফাটানো বন্ধ হয়। এভাবেও শব্দদূষণ কমে।
(৪)বিয়ে, জন্মদিন এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত আনন্দ-অনুষ্ঠানে 65 dB এর নীচে মাইক চালানো হলে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রিত হয়।
(৫)শব্দদূষণের খারাপ প্রতিক্রিয়াগুলি সম্পর্কে ছেলেমেয়ে, বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয়স্বজনকে ঠিকমতো বোঝাতে পারলে শব্দদূষণের তীব্রতা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
(৬)জনগণের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলে শব্দদূষণ কমানো যায়।
উপসংহার
বিভিন্ন পূজা ও উৎসবে মাইকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কঠোর আইন ও তার প্রয়োগের মাধ্যমে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তবেই শব্দদূষণের ফলে সৃষ্টি হয়, এমন রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। শুধুমাত্র শব্দ দূষণ নয় সকল প্রকার দূষণ মানব সভ্যতায় থেকে দুর্ভোগ। সকল প্রকার দূষণ প্রতি কারই কাম্য। মানুষের উৎশৃঙ্খলতা মানুষে সচেতনতা দ্বারাই বন্ধ হতে পারে। গনমাধ্যম সোশাল মিডিয়া, সরকার প্রশাসন, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, পৃথিবী সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টাই দূষণ মুক্ত পৃথিবী গড়ে তুলতে পারে।
Download : শব্দ দূষণ প্রজেক্ট pdf
আরও দেখুনঃ
এ পি জে আব্দুল কালাম প্রবন্ধ রচনা PDF
FAQ:-
1. শব্দের মাত্রা পরিমাপের একক কি?
শব্দের মাত্রা পরিমাপের একক ডেসিবেল।
2. শব্দ দূষণের ৫টি প্রভাব কি কি?
শব্দ দূষণের ফলে মানুষের শরীরে অস্বস্তি হয়, স্মৃতিশক্তি কমে যায়, ঘুম কমে যায়, মাথা ঝিমঝিম করে, বমিভাব আসে, স্নায়ু উত্তেজিত হয়।
3. শব্দ দূষণ কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়?
শব্দদূষণ তিনভাবে প্রতিরোধ বা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যেমন – প্রযুক্তিগত উপায়ে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ, আইনগত উপায়ে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ , ব্যক্তিগত এবং জনশিক্ষার মাধ্যমে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ।