প্লাস্টিক দূষণ প্রজেক্ট pdf

নমস্কার বন্ধুরা, আমরা আজ তোমাদের জন্য প্লাস্টিক দূষণ প্রজেক্ট pdf প্রদান করছি প্লাস্টিক দূষণ প্রজেক্ট সম্পর্কে প্রথমে বিস্তারিত আলোচনা করা হল এবং শেষে PDF প্রদান করা হল। আশা রাখছি তোমাদের সবার ভালো লাগবে।

ভূমিকা

প্লাস্টিক দূষণ হল পরিবেশ কর্তৃক প্লাস্টিক পদার্থের আহরণ যা পরবর্তীতে যে বন্যপ্রাণ, বন্যপ্রাণ আবাসস্থল, এমনকি মানবজাতীর ওপর বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করে। আকারের উপর ভিত্তি করে, মাইক্রো, মেসো, অথবা ম্যাক্রোবর্জ্য এই তিনভাগে প্লাস্টিক দূষণকে শ্রেণীকরণ করা হয়। নিয়মিত প্লাস্টিক পদার্থের ব্যবহার প্লাস্টিক দূষণের মাত্রাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে৷ পলিথিন ব্যাগ, কসমেটিক প্লাস্টিক, গৃহস্থালির প্লাস্টিক, বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত প্লাস্টিক পণ্যের বেশিরভাগই পুনঃচক্রায়ন হয় না। এগুলো পরিবেশে থেকে বর্জ্যের আকার নেয়৷ মানুষের অসচেতনতাই প্লাস্টিক দূষণের প্রধান কারণ। প্লাস্টিক এমন এক রাসায়নিক পদার্থ যা পরিবেশে পচতে অথবা কারখানায় পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ করতে প্রচুর সময় লাগে। তাই একে “অপচ্য পদার্থ” হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। তাই প্লাস্টিক বর্জ্য পরিবেশে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করে। সাধারনত উদ্ভিদকূল, জলজ প্রাণী, দ্বীপ অঞ্চলের প্রাণীরা প্লাস্টিক বর্জ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

প্লাস্টিক দূষণের কারণ

প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপত্তির স্থান থেকে বিভিন্ন উপায়ে ভিন্ন ভিন্ন আকারে পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে। সমুদ্র স্রোত, বাতাসের অসম গতি, ভৌগোলিক বৈচিত্রতার কারণে প্লাস্টিক বর্জ্য বিভিন্ন উপায়ে ছড়িয়ে পড়ছে। ক্যারিবিয়ান সমুদ্র অঞ্চলে গেলে তা ভালভাবে উপলব্ধি করা যায়। ঐসব অঞ্চলে সাধারণত মাইক্রো ও ম্যাক্রো আকারের প্লাস্টিক বর্জ্য পাওয়া যায়। যেহেতু প্লাস্টিক অপচ্য পদার্থ, তাই সৃষ্টির পর পুনঃচক্রায়ন না হওয়া পর্যন্ত এটি পরিবেশে অবস্থান করে। এটি নিয়মিত প্রাণীর খাদ্যচক্রে ঢুকে পড়ছে (মাইক্রো কণাসমূহ),যা প্রাণীর জন্য খুবই বিপদজনক। বিভিন্ন উপায়ে প্লাস্টিক বর্জ্য পরিবেশের ভারসম্যকে নষ্ট করছে।

মাটিতে প্লাস্টিক দূষণের কারণ

ক্লোরিনযুক্ত প্লাস্টিক বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ নির্গত করে যা ভূগর্ভস্থ জল ও ভূপৃষ্ঠীয় জলের সাথে মিশে যায়। অতঃপর ভূগর্ভস্থ ও ভূপৃষ্ঠীয় জল গ্রহণের সাথে সাথে তা আমাদের খাদ্যচক্রে ঢুকে পড়ে। কারণ এটির মাটিতে পচতে সময় লাগে ৪০০ বছর। আর এভাবেই জল গ্রহণের সাথে সাথে প্রতিনিয়ত আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। মাটিতে বিভিন্ন ধরনের অনুজীব বাস করে যা প্লাস্টিক অণুর ভাঙনে সাহায্য করে। এইসকল অণুজীবের মধ্য “সিউডোমোনাস(Pseudomonas)”, “নাইলন খাদক ব্যাকটেরিয়া (nylon-eating bacteria)”, ” ফ্লাভো ব্যাকটেরিয়া (Flavobacteria) অন্যতম। এইসকল ব্যাকটেরিয়া “নাইলোনেজ” এনজাইম ক্ষরণের মাধ্যমে নাইলন অণুকে ভেঙ্গে ফেলে। জীবাণুবিয়োজ্য প্লাস্টিক ভাঙনের মাধ্যমে মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হয়। মিথেন এক প্রকার গ্রীণহাউজ গ্যাস। এটি বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য দায়ী ।

সমুদ্রের জলে প্লাস্টিক দূষণ

২০১২ সালে, গবেষণার মাধ্যেমে জানানো হয় যে, সমগ্র বিশ্বের সমুদ্রে আনুমানিক ১৬৫ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য আছে। “নারডল” নামক এক প্রকার প্লাস্টিক যা সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এটি এমনই এক শিল্পজাত প্লাস্টিক যা প্লাস্টিক পণ্য বা কার্গো শীপ তৈরীতে ব্যবহৃত হয়। প্রচুর পরিমাণে নারডল সমুদ্রের পানিতে পতিত হয়। বছর বছর এই প্লাস্টিক পদার্থের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। এর ফলে প্লাস্টিক থেকে প্রতিনিয়ত ক্ষতিকর রাষায়নিক পদার্থ যেমন: বায়োস ফেনল, পলিস্টিরিন ইত্যাদি পরিস্রুত হয়। এক পরিসংখ্যানে জানা যায় যে, সমুদ্রের পানিতে ৫ ট্রিলিয়নের বেশি প্লাস্টিক ভেসে থাকে। আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে যে পরিমাণ তারা আছে, সুমুদ্রে তার থেকেও বেশি। ১৪ মিলিয়ন টনের বেশি প্লাস্টিক প্রতিবছর সুমুদ্রে জমা হচ্ছে।

প্লাস্টিক দূষণের প্রভাব বা ফলাফল

 সামুদ্রিক প্রাণীর উপর প্রভাব

সামুদ্রিক প্রাণীর উপর প্লাস্টিক দূষণের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। সামুদ্রিক কচ্ছপের মৃত্যু প্লাস্টিক দূষণের কারণে ঘটছে। সামুদ্রিক কচ্ছপ সাধারণত জেলিফিশ, সামুদ্রিক কীট খেয়ে জীবনধারণ করে। জেলিফিসের আকার ও আকৃতি প্লাস্টিক ব্যাগের মত হওয়ায় কচ্ছপ ভুল করে প্লাস্টিক ব্যাগ ভক্ষণ করে। এতে তাদের খাদ্য নালিকা বন্ধ হয়ে যায় এবং খাদ্য গ্রহণ করতে অক্ষম হওয়ায় ধীরে ধীরে মারা যায়। এর চেয়েও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সামুদ্রিক তিমি। সামুদ্রিক তিমির পাকস্থলীতে প্রচুর পরিমাণে প্লাস্টিক পাওয়া গিয়েছে। এছাড়াও সামুদ্রিক ছোট মাছের পাকস্থলীতে প্লাস্টিক পাওয়া গিয়েছে। তাই প্লাস্টিক দূষণ সামুদ্রিক মৎস্য প্রজাতির জন্য হুমকিস্বরূপ।

পাখির উপর প্রভাব

প্লাস্টিক দূষণের প্রভাব শুধুমাত্র সামুদ্রিক মাছের উপর নয় সামুদ্রিক পাখির উপরও রয়েছে। বেশিরভাগ সামুদ্রিক পাখির পেটে প্রচুর পরিমাণে প্লাস্টিক পাওয়া যায়। কারণ সমুদ্রে ভাসমান প্লাস্টিক ও মাছের মধ্য তুলনা না করতে পারায় পাখিরা প্লাস্টিক গ্রহণ করে। ২০০৪ সালে এক গবেষণায় মাধ্যমে গবেষকরা জানান “সামুদ্রিক গিল” এর পেটে ৩০ খন্ডের সম পরিমাণ প্লাস্টিক পাওয়া যায়। প্লাস্টিক পদার্থ থেকে সাধারণত বিষাক্ত রাসায়নিক পলিক্লোরিনেটেড বায়োফেনল নির্গত হয়। এই বিষাক্ত রাষায়নিক দেহের বিভিন্ন টিস্যুকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। পাখিরা যখন প্লাস্টিক পদার্থ গ্রহণ করে তখন তাদের পেটেও বিষাক্ত রাষায়নিক পলিক্লোরিনেটেড বায়োফেনল নির্গত হয়। এর জন্য তাদের দেহের টিস্যু ধ্বংস হয়, তাদের দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় । ধীরে ধীরে পাখির মৃত্যু হয়। এক পরিসংখ্যানের মাধ্যমে জানা যায় যে, ১.৫ মিলিয়ন লাইসন অ্যালবাট্রস যারা উত্তর ক্যরোলাইনে বাস করে তাদের পাকস্থলিতে প্লাস্টিক পদার্থ পাওয়া যায় এবং তাদের মৃত্যু ঘটে।

মানুষের উপর প্রভাব

প্লাস্টিক দূষণ মানুষের স্বাস্থ্যের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। সাধারনত প্লাস্টিক পদার্থে প্রচুর পরিমাণে রাসায়নিক রঞ্জক মেশানো হয়। এসকল রঞ্জক কারসিনজেন হিসেবে কাজ করে ও এন্ডোক্রিনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ২০২২ সালের মার্চে প্রকাশিত এক গবেষণা ফলাফলে প্রথমবারের মতো মানুষের রক্তে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ শনাক্ত হয়। এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৮০ শতাংশ মানুষের রক্তে এই ক্ষুদ্র কণা পায় বিজ্ঞানীরা। গবেষণা প্রতিবেদনটি এনভায়রনমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল জার্নালে প্রকাশিত হয়। প্লাস্টিক দূষণ কমানোর উপায়/নিয়ন্ত্রণ/প্রতিরোধ প্লাস্টিক দূষণ এখন সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে দুশ্চিন্তার বিষয়। এখনই যদি কোন ব্যবস্থা নেওয়া না হয়

প্লাস্টিক দূষণ নিয়ন্ত্রণ বা প্রতিরোধ

প্লাস্টিক দূষণ এখন সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে দুশ্চিন্তার বিষয়। এখনই যদি কোন ব্যবস্থা নেওয়া না হয় তাহলে ভবিষ্যতে আমাদের অনেক বড় বিপদের মধ্যে পড়তে হবে। নিম্নলিখিত উপায় অবলম্বন করে প্লাস্টিক দূষণ নিয়ন্ত্রণে আনা যেতে পারে।

১.পুনর্নবীকরণ – প্লাস্টিক রিসাইক্লিং বা ব্যবহার করা প্লাস্টিকগুলি যাতে আবার ব্যবহার করা যায় সেই ব্যবস্থা করলে প্লাস্টিক দূষণ অনেকটাই মোকাবিলা করা যাবে। ব্যবহৃত প্লাস্টিকের ব্যবহার করে নানান নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস তৈরি করা যেতে পারে। এই কাজে সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন সয়ম্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের স্বনিযুক্তির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। আবার, সম্প্রতি রাস্তা তৈরির কাজে পিচের পরিবর্তে প্লাস্টিক ব্যবহার করার কথা ভাবা হচ্ছে। তেমনটা হলে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের একটা বড় অংশ পুনরায় ব্যবহার করা যাবে।

২. নিয়ন্ত্রণ – গবেষণায় দেখা গেছে যে, ৫ মাইক্রনের কম পুরু প্লাস্টিক পরিবেশের পক্ষে বেশি ক্ষতিকর। তাই অবিলম্বে সেগুলির উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তাছাড়া, সামগ্রিকভাবে প্লাস্টিকের ব্যবহারও নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। প্রয়োজন হলে, আইন তৈরি করে প্লাস্টিক উৎপাদন এবং প্লাস্টিকজাত সামগ্রীর ব্যবহার কঠোরহাতে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

৩. বিকল্প তৈরি – প্লাস্টিক বর্তমানে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে। তাই হঠাৎ করে প্লাস্টিকের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলে অনেকেই সমস্যার সম্মুখীন হবেন। সুতরাং প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হলে বা পুরোপুরি বন্ধ করতে হলে তার বিকল্প হিসেবে কিছু সামগ্রী সুলভ করতে হবে। যেমন, প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগের পরিবর্তে কাগজের প্যাকেট বা পাটের ব্যাগ বাজারে সহজলভ্য করতে হবে। উপসংহার পরিশেষে বলা যায়, প্লাস্টিক দূষণের অনিবার্য পরিণতি থেকে মানব সভ্যতাকে রক্ষা করতে হলে উপরোক্ত পদক্ষেপগুলির সঙ্গে প্রয়োজন মানুষের সচেতনতা। যতদিন না পর্যন্ত প্লাস্টিক ব্যবহারের কুফল সম্পর্কে জনমানসে সচেতনতা তৈরি হচ্ছে, ততদিন আইন তৈরি করেও কোনো লাভ হবে না। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে এই কাজ করা যেতে পারে। 

উপসংহার

অন্যান্য দুষনের মতই প্লাস্টিক দূষনের বিষময় প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেননা তা পরিবেশকে ভয়ঙ্কর ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। সর্বোপরি, প্লাস্টিক দূষণের অনিবার্য পরিনিতি থেকে মানব সভ্যতাকে রক্ষা করতে হলে এই পদক্ষেপগুলি সঙ্গে প্রয়োজন মানুষের সচেতনতা। যতদিন না পর্যন্ত প্লাস্টিক ব্যবহারের কুফল সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি হচ্ছে, ততদিন আইন তৈরি করেও কোনো লাভ হবে না। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে এই কাজ করা যেতে পারে। 

Download PDF : প্লাস্টিক দূষণ প্রজেক্ট

আরও দেখুনঃ

শব্দ দূষণ প্রজেক্ট pdf

জল দূষণ প্রজেক্ট pdf

বায়ু দূষণ প্রজেক্ট pdf

Leave a Comment