নমস্কার বন্ধুরা, আজ আমরা বিজ্ঞানের জয়যাত্রা রচনা নিয়ে একটি পোস্ট বর্ণনা করছি আশা রাখছি সবার ভালো লাগবে।
ভূমিকা
বিজ্ঞানের যুক্তিবাদ আধুনিক জীবনে প্রগতির সোপান। সভ্যতার অগ্রগতিতে বিজ্ঞানের অবদান আজ সর্বজনবিদিত। বিজ্ঞান আজ মানবসভ্যতায় এনেছে যুগান্তর। সভ্যতার ঊষালগ্নে মানুষ ছিল অরণ্যচারী ও গুহাবাসী। কিন্তু সে সময়ে মানুষকে বিরুদ্ধ শক্তির সঙ্গে পদে পদে সংগ্রাম করতে হয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কারে মানবসভ্যতার সুরম্য ইমারত আজ প্রতিষ্ঠিত। আমাদের জীবনের ব্যবহারিক ক্ষেত্রে ও ভাবনার মধ্যে বিজ্ঞানচেতনাকে বিস্তার করতে হবে। বিজ্ঞানের যুগান্তকারী আবিষ্কার ও তার জয়যাত্রাকে মানব কল্যাণে নিয়োজিত করতে পারলে, সেটিই হবে সভ্যতার অগ্রগতির ক্ষেত্রে প্রধান কাজ।
বিজ্ঞানের উৎপত্তি
প্রয়োজনই সৃষ্টির প্রেরণা জোগায়। সৃষ্টির ঊষালগ্নে যেদিন অরণ্যচারী মানুষ বিদ্যুতের ঝলকানি দেখে চমকে উঠেছিল, হয়তো সেদিনই তার চেতনার গভীরে জ্বলে উঠেছিল বিশেষ জ্ঞানের আলোক শিখা। আর সেই আলোকিত পথ ধরেই শুরু হয় বিজ্ঞানের অন্তহীন আলোক পথযাত্রা।
প্রতিদিনের জীবনে বিজ্ঞান
বিজ্ঞান আজ মানব সভ্যতার দিশারী। বর্তমানের বান্ধব—ভবিষ্যতের স্বপ্ন। মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গে বিজ্ঞান আজ সম্পৃক্ত। খোলা চোখে তাই আমাদের প্রাত্যহিক জীবনচর্চার দিকে এক ঝলক তাকানো যাক— (ক) পাখির কাকলিতে নয়, আজ আমাদের ঘুম ভাঙে মোবাইল এলার্মের শব্দে। (খ) ঘরে বসেই আমরা দেখে নিই বিশ্বের সংবাদ—টিভি, খবরের কাগজ কিংবা ইন্টারনেটের সাহায্যে (গ) প্রিয় বন্ধুকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা পাঠাই মোবাইলের মাধ্যমে (ঘ) রাতের অন্ধকারকে জয় করে, পড়তে বসি—বৈদ্যুতিক বাল্বের আলোয়। তাছাড়া ফ্যান, ওয়াশিং মেসিন, মোবাইল, গিজার, বাইক, এয়ার কন্ডিশনার, আলো, বাল্ব, সিনেমা, যোগাযোগ মাধ্যম, কম্পিউটার, লিফট-সবই আজ আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের অঙ্গ—বিজ্ঞানের আশীর্বাদ।
কৃষি ও শিল্পক্ষেত্র বিজ্ঞান
কৃষকও আজ গ্রহণ করছে বিজ্ঞানের দান। ভূমিকর্ষণ থেকে ফসল সংগ্রহ, ঝাড়াই- মাড়াই, সংরক্ষণ সবক্ষেত্রে। মাটি পরীক্ষার মাধ্যমে কৃষকরা বুঝে যাচ্ছেন-কোন জমিতে কি ফসল হতে পারে। ডিপ টিউবওয়েল বসিয়ে একই জমিতে তিনবার ফসল উৎপাদিত হচ্ছে। কৃষির সঙ্গে শিল্পক্ষেত্রেও বিজ্ঞানের দান যথেষ্ট-তা যে কোন শিল্পের দিকে তাকালেই বোঝা যায়৷
পড়ুন– দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা
চিকিৎসা বিজ্ঞান
চিকিৎসা বিজ্ঞানে আজ এসেছে যুগান্তর। মানুষ বহু দুরারোগ্য ব্যাধিকে নির্মূল করতে পেরেছে। যেমন-কলেরা, বসন্ত, টাইফয়েড, যক্ষ্মা, ম্যালেরিয়া। এমনকি ‘এইডস্’-এর মতো রোগের টিকাও আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে আবিষ্কৃত হবে বলে বিজ্ঞানীরা আশ্বস্ত করেছেন। এছাড়া এক্স-রে বা রঞ্জন রশ্মির গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না। শুধু তাই নয়, সার্জারির ক্ষেত্রে আজ এসেছে যুগান্তর। হার্টের সার্জারি করে মানুষকে জীবনদানও আজ বিজ্ঞানের দান।
মহাকাশ ও পরমানু বিজ্ঞান
জ্যোতিবিজ্ঞানের নির্মম সত্যকে প্রকাশ করার জন্য বুনোকে একদিন আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল। সৌরকলম্বের কথা প্রকাশ করায় গ্যালিলিওকে বন্দী করা হয়েছিল, কিন্তু এঁদের সাধনা ব্যর্থ হয়নি, মহাকাশ বিজ্ঞানের বিস্ময়কর অগ্রগতিই তার প্রমাণ। মানুষ আজ চাঁদে পাড়ি দিচ্ছে, রকেট পাঠিয়ে মঙ্গল ও শুরু গ্রহের ছবি তুলছে। শুধু তাই নয়, পরমাণুরহস্য ভেদ করে এবং পরমাণু-ভাঙার পথতি উদ্ভাবন করে মানুষ আজ অসীম ক্ষমতার অধিকারী। তবে পরমাণু বিজ্ঞানের ফাসোত্মক দিকটিও স্মরণে রাখতে হবে।
শান্তির কাজে বিজ্ঞান
বিজ্ঞানের বিভিন্ন অবদানের মধ্য দিয়ে শুধুমাত্র যে দৈহিক শান্তিলাভ করা যায়, তা নয়, বরং মানুষ আজ মানসিক দিক দিয়েও তৃপ্ত। হিসাব-নিকাশ নির্ভুলভাবে পরীক্ষা করা, বিভিন্ন পরিসংখ্যান প্রস্তুত করা ইত্যাদি কাজে বিজ্ঞান ক্যালকুলেটর, কম্পিউটার, রোবটের মতো মূল্যবান মেশিন আবিষ্কার করেছে। বলাবাহুল্য বিজ্ঞান আজ তাই শাস্তি ও সুরক্ষার কাজে প্রহরীর মতো দণ্ডায়মান।
শেষ কথা
বিজ্ঞান আমাদের প্রগতির বাহন। গোটা বিশ্বকে সে আমাদের হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। কিন্তু কিছু স্বার্থপর মানুষের কুটিল চক্রান্তে বিজ্ঞান আজ কলঙ্কিত ও অভিশপ্ত। তাইতো বিজ্ঞানের অপপ্রয়োগ রুখে আমাদের কল্যাণময়ী বিজ্ঞানকে আলিঙ্গন করতে হবে। তবেই তো এগিয়ে চলবে মানব সভ্যতার অগ্রগতির জয়রথ আর অভিশপ্ত বিজ্ঞানের কালিমাকে দূর করে আমরা পৌঁছে যাব নবসৃষ্টির আনন্দলোকে।
আরও পড়ুনঃ