রাজা রামমোহন রায় প্রবন্ধ রচনা একটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা। স্কুলের পরীক্ষায় এসে থাকে নীচে সুন্দর ও সহজ সরল ভাষায় রাজা রামমোহন রায় প্রবন্ধ রচনা বর্ণনা করা হল।
ভূমিকা
রাজা রামমোহন রায় ছিলেন প্রথম ভারতীয় ধর্মীয়-সামাজিক পুনর্গঠন আন্দোলন ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠাতা এবং বাঙালি দার্শনিক। তৎকালীন রাজনীতি, জনপ্রসাশন, ধর্মীয় এবং শিক্ষাক্ষেত্রে রাজা রামমোহন রায় উল্লেখযোগ্য প্রভাব রাখতে পেরেছিলেন । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাকে ভারতপথিক এবং দিলিপ কুমার বিশ্বাস তাকে বিশ্বপথিক বলে অভিহিত করে। তাঁকে ভারতীয় নবজাগরণের অগ্রদূত বলা হয়।
জন্ম ও পরিবার
রাজা রামমোহন রায় এর জন্ম হয় ১৭৭২ সালের ২২ শে মে হুগলীর রাধানগর গ্রামে। তিনি ছিলেন এক সম্ভ্রান্ত ব্রাহ্মণ পরিবারের সন্তান। তাঁর প্রপিতামহ কৃষ্ণকান্ত দিল্লির মোঘল বাদশা ফারুকশিয়রের সময়ে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের সুবেদারের আমিনের কাজ করতেন। এই কাজের সূত্রেই তাদের পরিবারে রায় পদবীর প্রচলন বলে মনে করা হয়। প্রপিতামহ কৃষ্ণকান্তের কনিষ্ঠ পুত্র ব্রজবিনোদ রায় ছিলেন রামমোহনের পিতামহ।
শিক্ষাজীবন
ছোটোবেলা থেকেই রামমোহন রায়ের লেখাপড়ায় প্রবল আগ্রহ ছিল । তিনি ৪ বছর বয়সেই গ্রামের স্কুলে বাংলা এবং আরবি ভাষা শিখতে থাকেন । তারপর পাটনা তে গিয়ে আরবি ও ফার্সি দুটো ভাষাতেই তিনি অভিজ্ঞতা অর্জন করেন । 12 বছর বয়সে তিনি সংস্কৃত ভাষা শেখার জন্য কাশী ধামে চলে যান এবং ৪ বছর সেখানে থেকে পড়াশোনা করেন । এরপর তিনি বেদান্ত শাস্ত্রের উপরেও গবেষনা করেছিলেন ।
কর্মজীবন
১৭৯৬ সালে রামমোহন পৈতৃক ও অন্যান্য সূত্রে কিছু জমিজমা বাগান, কলকাতায় জোড়াসাঁকোর বাড়ির মালিকানা লাভ করেন। ওই বছরই কলকাতায় থিতু হয়ে তিনি মহাজনের কাজ শুরু করেন। এরপর ১৮০৩ থেকে ১৮১৪ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর বেতনভুক্ত কর্মচারী হিসাবে কাজ করেন রামমোহন। জন ডিগবি নামক এক ব্রিটিশ সিভিলিয়ানের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলার রংপুরে তিনি দেওয়ান হিসাবে নিযুক্ত হন। কিছু বেশিদিন তিনি চাকরী করেননি। সমাজ সংস্কার ও সাহিত্য সাধনার কাজে সম্পূর্নভাবে নিজেকে নিয়োজিত করেন।
ধর্মসংস্কার
১৮১৫ খ্রী: “আত্মীয় সভা” গঠন করে ধর্মের নামে কুসংস্কার ও গোঁড়ামির বিরুদ্ধে রামমোহন জেহাদ ঘোষনা করেন – “আমি কখনো হিন্দু ধর্মকে আক্রমণ করিনি, আমি শুধু কুসংস্কার ও গোঁড়ামিকে আক্রমণ করেছি। ১৮২৮ খ্রী: তিনি একেশ্বরবাদ প্রচারের উদ্দেশ্যে ব্রাহ্মসভা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৩০ খ্রী:- এটি ব্রাহ্মসমাজ নামে পরিচিত হয়।
সমাজসংস্কার
জাতির নবজীবনে এক দরদি বাস্তববাদী রাজা রামমোহন রায় জাতপাত, অস্পৃশ্যতা, বর্ণ প্রথা পুরোহিত প্রাধান্য, সতীদাহ প্রথা, বাল্যবিবাহ, গঙ্গাসাগরে সন্তান বিসর্জন ইত্যাদির তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন সামাজিক বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে জাতিধর্মবর্ণ, স্ত্রী -পুরুষ, উচনীচ নির্বিশেষে এক সুস্থ সাম্যবাদী সমাজগঠনের স্বপ্ন দেখেছিলেন। রামমোহনের ঐকান্তিক চেষ্টায় ১৮খ্রী: “রেগুলেশন –XVII এই আইন দ্বারা সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ হয়েছিল। জমিদারি অত্যাচার ও প্রজাপীড় এর বিরুদ্ধেও সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন তিনি।
সতীদাহ প্রথা বিলুপ্তি
রামমোহন রায়ের কর্মকান্ডের মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ও আলোচিত হল সতীদাহ প্রথার বিলুপ্তি। সেযুগে এই বর্বর অমানবিক হিন্দু প্রথা অনুযায়ী হিন্দু বিধবা নারীদের তাদের মৃত স্বামীর সঙ্গে একই চিতায় পুড়ে মরতে হত। সমাজের বিভিন্ন অংশে এই নৃশংস প্রথার বিরুদ্ধে চাপা অসন্তোষ ও আপত্তি থাকলেও গোঁড়া হিন্দুদের সম্মিলিত, ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে সোচার হওয়ার সাহস বা তেজ প্রথম রাজা রামমোহনের মধ্যেই দেখা যায়। তিনি বিভিন্ন যুক্তিগ্রাহ্য লেখালেখির মাধ্যমে সতীদাহ থার বিরুদ্ধে জনমত গঠনে উদ্যোগী হন। এ ব্যাপারে সে যুগের কিছু গন্যমান্য ব্যক্তি তাঁর সমর্থনে এগিয়ে আসেন। প্রবল সামাজিক বিরোধিতার সঙ্গে নিরলস লড়াই করে রামমোহন রায় অবশেষে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বড়োলাট উইলিয়াম বেন্টিস্কের সহায়তায় ১৮২৯ খ্রী: সতীদাহ প্রথাকে আইনত নিষিদ্ধ করতে সমর্থ হন।
শিক্ষা সংস্কার
রামমোহনের কর্মকান্ড রাজনীতি, জনপ্রশাসন, ধর্ম ছাড়া আর যে ক্ষেত্রটিকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে তা হল শিক্ষা । ১৮১৭ খ্রী: ডেভিড হেয়ারের সহযোগীতায় কলকাতায় হিন্দু কলেজ ১৮২২ খ্রী: সম্পূর্ণ নিজের খরচে অ্যাংলো-হিন্দু স্কুল, ১৮২৬ খ্রী: বেদান্ত কলেজ ইত্যাদি রামমোহনের শিক্ষাক্ষেত্রে অবদানের নিদর্শন।
পুরষ্কার ও সম্মান
১৮৩০ খ্রী: ১৯ শে নভেম্বর দিল্লীর বাদশাহ দ্বিতীয় আকবর রামমোহনকে “রাজা&”উপাধি দিয়ে তাঁর জন্য পার্লামেন্টে কিছু বিষয়ে তদ্বির করবার জন্য বিলেত পাঠান, সেই সময়ে এই কাজের জন্য ভারতবর্ষে রামমোহনই ছিলেন একমাত্র উপযুক্ত ব্যক্তি। বিলেতে রামমোহন ইউনিটেরিয়ান সমিতির সম্বর্ধনা লাভ করেন।
উপসংহার
১৮৩৩ খ্রী: মেনিনজাইটিস রোগে আক্রান্ত হয়ে ব্রিস্টলের কাছে স্টেপলটনে ভারতের এই নবজাগরণের অন্যতম পথিকৃতের জীবনাবসান ঘটে। রাজা রামমোহন রায় যেমন ছিলেন বাংলা গদ্যের জনক তেমনই ছিলেন বাংলার নবজাগরণেরও জনক। তাকেই বলা হয় ভারতের প্রথম আধুনিক মানুষ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রামমোহনকে ”ভারতপথিক” আখ্যা দেন যা সর্বাংশে যথার্থ।
FAQ :
1. সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন কে?
উইলিইয়াম কেরি এবং রাজা রাম মোহন রায় সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন।
2. রাজা রামমোহন রায় কি জন্য বিখ্যাত?
রাজা রামমোহন রায় ভারতীয় নবজাগরণের জনক হিসাবে বিখ্যাত।
3. ভারতের প্রথম আধুনিক মানুষ কে ছিলেন?
গোপাল কৃষ্ণ গোখলে রাজা রামমোহন রায়কে আধুনিক ভারতের জনক বলেছেন।
4. কোন গভর্নর জেনারেল কত সালে সতীদাহ রদ আইন পাস করেন?
গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক সতীদাহ রদ আইন পাস করেছিলেন।
আরও পড়ুনঃ