গোপাল ভাঁড়ের হাঁসির গল্প | Gopal Bharer Golpo

গোপাল ভাঁড় ছিলেন ভারী মজার মানুষ। তার গল্প পড়ে মজা পাবে না, এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। gopal bharer golpo ছোটবেলায় বইতে পড়েছে কিংবা টিভিতে দেখেছে। আজ আমরা গোপাল ভাঁড়ের মজার কিছু গল্প উপস্থাপিত করছি আশা রাখছি সবার ভালো লাগবে। প্রত্যেকটি গল্প পড়ার অনুরোধ রাখছি।

গোপাল ভাঁড় এর আলু কেনা

গোপাল একবার হাটে আলু কিনতে গিয়েছিল। পথেই দেখা হল এক বন্ধুর সাথে। রসিক বন্ধুটি গোপালের আলু খরিদ করার কথা শুনে বলল, ভুমি যদি আলু বিনি পয়সায় খরিদ করতে পার দশ টাকা পুরষ্কার পাবে। গোপালকে বন্ধুটি রসিকতা করার লোভে একটু উসকে দিল। মনে করেছিল গোপাল পারবে না।

গোপাল বন্ধুকে বললে, ও এই কথা? তুমি আমার সাথে হাটে চল দেখবে, দিব্যি বিনি পয়সায় আলু কিনে নিয়ে বাড়ি ফিরব। কাউকেও কোনও পয়সা দিব না। তা তুমি সচক্ষে দেখতে পারবে।

হাটে গিয়ে গোপাল প্রত্যেক আলু বিক্রেতাকে জিজ্ঞেস করলে ভাই, আমি যদি তোমার কাছে থেকে পাঁচ সের আলু কিনি, কটা আলু ফাউ দেবে তুমি আমাকে বল?  শীতের সময় সেদিন বাজারে আলুর প্রচুর আমদানি। আলুওয়ালারা বললে পাচঁটা করে আলু ফাউ পাবেন পাঁচ সের আলু কিনলে। এর বেশি দিতে পারব না।

গোপাল তখন প্রত্যেক আলুওয়ালার ঝুড়ি থেকে পাঁচটা করে আলু তুলে নিয়ে বলল, এই হাটে কেবল ফাউটা নিলাম, সামনের হাটে তোমাদের সকলের কাছ থেকে পাঁচ সের করে আলু কিনব।

সকলেই হ্যা করে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখল। গোপাল দিব্যি বিনি পয়সার আলু কিনে বাড়ি ফিরল।

বন্ধুকে বাধ্য হয়েই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গোপালকে দশ টাকা পুরষ্কার দিতে হল। না দিলে হয়ত গোপাল কোনও সময় ১০০ টাকা হাতে তুলে নিয়ে হাওয়া করে দেবে। তার চেয়ে আগে দেওয়া ভাল।

গোপাল ভাঁড় এর চিঠিলেখা

গোপাল লেখাপড়া বিশেষ কিছু জানত না। যদি বা লেখাপাড় কিছু জানত কিন্তু হাতের লেখা ছিল খুব খারাপ। কিন্তু রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের ভাঁড় হিসাবে তার খ্যাতি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। পাড়া পড়শীরা তাই তাকে সমীহ করে চলত কেউ কেউ বা বিভিন্ন প্রযোজনে গোপালের সঙ্গে এসে দেখা করত পরামর্শ নিত, গোপালের বুদ্ধি নিয়ে প্রায় সকলে চলত।

একদিন এক বুড়ি এসে বলল, গোপাল ভাই, আমার একখানা চিঠি লিখে দাও না। আমার নছেলে পুরী থেকে দশক্রোশ দূরে নাগেশ্বরপুর গেছে। কোনও খবর পাচ্ছিনে বেশ কয়েকদিন হল। টাকা পয়সাও নাই যে কাউবে পাঠাব।

বুড়ির কথা শুনে গোপাল বললে, আজ তো আমি চিঠি লিখতে পারব না ঠাকমা।

কেন ভাই, আজ কি যে, তুমি চিঠি লিখতে পারবে না। অনেকদিন হয়ে গেছে আজ না লিখলেও নয়। আর তোমার দেখা সব সময়পাই না যে তোমাকে চিঠি লিখতে বলি। আজ দেখা পেয়েছি, একখানা চিঠি লিখে দাও না ভাই? আমি বুড়ো মানুষ কার কাছে যাব চিঠি লিখতে ভাই, তুমিই একমাত্র ভরসা।

আমার যে পায়ে ব্যাথ্যা গো ঠাকমা।

পায়ে ব্যথা তাতে কি হয়েছে? চিঠি লিখবে তো হাত দিয়ে? পায়ে কি তুমি চিঠি লিখবে নাকি। তোমার কথা শুনলে হাসি পায়। তোমার মত এমন কথা কোথাও শুনিনি।

গোপাল হেসে বলল, চিঠি তো লিখব হাত দিয়েই। কিন্তু আমার চিঠি অন্য কেউ যে পড়তে পারবে না। আমার লেকা চিঠি আমাকে নিজে গিয়ে পড়েদিয়ে আসতে হবে। আমার যে এখন পায়ে ব্যথা। এখান থেকে পুরী আবার পুরী থেকে দশ ক্রোশ দূরে নাগেশ্বরপুরে চিঠিটা তো আমি পড়ে  দিয়ে আসতে পারব না। তুমি অন্য কাউকে দিয়ে চিঠিখানা এবারকার মতো লিখিয়ে নাও, ঠাকমা। আমার পা ভাল হলে চিঠি লিখে দেব এবং নিজে দিয়ে পড়ে আসব।

বুড়ি মা এর পর আর কি বলবে। বাধ্য হয়ে চিঠি না লিখিয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হল গোপালের বাড়ি থেকে।

গোপাল ও মা কালী

গোপাল একদিন পাশা খেলতে খেলতে দাতের যন্ত্রনায় ভীষণ কষ্ট পাচ্ছিল। অসম্ভব যন্ত্রনা যাকে বলে। যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে সে শুয়ে পড়ে কাতরাতে কাতরাতে বলতে লাগল, দোহাই মা কালী! এ যাত্রায় আমার যন্ত্রণাটা কমিয়ে দাও…… আমি জোড়া পাঠা বলি দেব মা পুজো দেব ভাল করে তোমায় মা…

কিছুক্ষণ পরে মা কালীর কৃপায় তার যন্ত্রনার উপশম হল। সে আবার খোশ মেজাজে পাশা খেলতে লাগল মনের আনন্দে। গোপালের পাশা খেলার সাথী এক সময় গোপালকে বললে, মায়ের দয়ায় দাঁতের যন্ত্রণা তো ষ্ট করে সেরে গেল।

মায়ের কাছে তাহলে জোড়া পাঠা বলি দিচ্ছ তো? মনের বাসনা, পাঠা বলি হলে বলির মাংস খাওয়া যাবে।

গোপাল পাশার চাল দিয়ে খোশ মেজাজে বললে, যন্ত্রণা আমার এমনিতেই সেরে যেত। এ ব্যাপারে আর মা কালীর কেরামতি কোথায়? যন্ত্রনায় অস্তির হয়েকি বলতে কি বলে ফেলেছি, সেজন্য আবার জোড়া পাঠা বলি দিতে হবে নাকি? মা কালী আমার মাথায় থাক। তারপর গোপাল দিব্যি খোশ মেজাজে পাশা খেলতে লাগল। ওদের কথায় আর পাত্তা দিল না।

খেলার সাথির মন খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু কথায় বলে- ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। বেশ কিছুক্ষণ পেরে গোপালের দাঁতের যন্ত্রণা আবার অসম্ভব রকম বেড়ে গেল। এবারকার যন্ত্রণা আগের চেয়েও ভয়ানক।

গোপাল যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে মা কালীর উদ্দেশ্য হাত জোড় করে কাতরাতে কাতরাতে বললে- হে মা করুণাময়ী, হে মা দয়াময়ী হে মা জগজ্জননী যে কথা বলেছি…. সেই কথাটিই ধরে নিলে মা? আমি কি সত্যি সত্যিই বলেছি তোমার কাছে জোড়া পাঁঠা বলি দেব না? এত বোঝ মা, ঠাট্টা বোঝ না? এবার খেলার সাথীর মুখে জোর হাসি ফুটে উঠল, বলির পাঁঠার প্রসাদ মাংস নির্ঘাত পাবে এই মনে ভেবে।

Facebook caption Bangla For 2024

গোপাল ও কবি

‘বিদ্যাসুন্দর’ কাব্যের রচয়িতা কবি ভারতচন্দ্র রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সভাকবি ছিলেন। আদি রস পরিবেশনের ব্যাপারে তাঁর সমকক্ষ তখনকার দিনে কেউ ছিলেন না। কৃষ্ণচন্দ্রেরও সমঝদার শ্রোতা ছিলেন, কবি রাজাকে বিদ্যাসুন্দর পড়ে শুনাচ্ছিলেন।

 গোপাল রাজসভায় ঢুকে কবিকে কাব্যের পান্ডুলিপিটা কাৎ করে ধরে পড়তে দেখে চেচিয়ে বলে উঠল, একি করছেন কবি? আপনার কাব্য যে রসে টই টম্বুর। কাৎ করবেন না দাদা, রস গড়িয়ে পড়বে। সোজা করে ধরুন।

গোপালের কথা শুনে রাজসভাস্থ সকলেই হো হো করে হেসে উঠলেন। কৃষ্ণচন্দ্র এরূপ সুন্দর কথা শুনে সঙ্গে সঙ্গে গোপালকে মনের মতো পুরস্কার দিলেন।

গোপালের সূক্ষ্ম বিচার

লোক পরম্পরায় গোপালের সূক্ষ্ম বিচার বৃদ্ধি দেখে এক প্রতিবেশী তার মোকদ্দমা চালাবার জন্য গোপালকে অনুরোধ করে। কিন্তু গোপাল মোকদ্দমার কাহিনী শুনে বারবার না-না করা সত্ত্বেও প্রতিবেশী লোকটি নাছোড়বান্দা হওয়ায় বাধ্য হয়ে গোপাল প্রতিবেশীর মোকদ্দমাটি হাতে নেয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওই মামলার হার হয়।

ভদ্রলোক কাঁদতে কাঁদতে বললে এ কি করলেন, আমার সব গেল। তখন গোপাল বলল, দেখুন ব্যারাম সেরে উঠতে উঠতেও লোক অনেক সময়ে হার্টফেল করে মারা যায়। তাকে ব্যারাম-মরা বলা যেতে পারে না। আপনার ব্যাপারটও ঠিক সেই রকম। মামলার বিচারে আপনি হারেন নি। হাকিমেরা মূলত তিনটি বিষয়ের উপর বিবেচনা করে রায় দেয় সাধারণত- তিনটি বিষয় হল অনুমান, প্রমাণ এবং স্বীকারোক্তি।

অনুমানটাও আপনার স্বপক্ষে ছিল, অর্থাৎ যে-কেউ মামলার বিবরণ শুনলে বলতে বাধ্য ছিল যে বিবাদী দোষী। হাকিমও নিশ্চয়ই ভাই ভেবেছেন। কিন্তু অনুমানের উপর নির্ভর করে তো আর রায় দেওয়া চলে না।

দ্বিতীয়তঃ হলো প্রমাণ। প্রমাণ করা এত শক্ত যে, ওর ভেতরে শেষ পর্যন্ত গলদ থেকেই যায়। আমি আপনার মামলা প্রমাণ করে ছেড়েছি, এ কথা যাকে জিজ্ঞাসা করবেন সেই বলবে, কিন্তু ঐ যে বললাম- গলদ রয়ে গেছে গোড়ায়। থাকতেই হবে গলদ! বিপক্ষের উকিল আমাদের সব অকাট্য প্রমাণগুলি মিথ্যে বলে উড়িয়ে দিয়েছে।

তৃতীয়তঃ বাকি রইল স্বীকারোক্তি। আসামী লোকটা যদি ভদ্রতা করে দোষ স্বীকার করে যেতো, তাহলে আর কোন কিছুতেই আটকাতো না আমাদের। কিন্তু তা সে কোনমতেই করলে না কিনা! তাতে আমি আর কি করতে পারি বলুন। 

মামলা জেতবার আগেই তো হার হলো। ব্যায়রাম থেকে সেরে উঠতে উঠতে হার্টফেল। এতে বলুন আমার কি দোষ আছে? কারণ এর বেশী আর ভদ্রলোককে কিছু বলতে পারেই না গোপাল।

ভদ্রলোক রেগেই চলে গেলেন।

গোপালের পাঞ্জাবি

গোপাল নতুন পোষাক করিয়ে এনেছে। কাল রাত্রে তার বিয়ে। এই পোষাক পরেও গোপাল বিরক্তিভাবে তার মাকে বলল, ‘জানো মা, দর্জি ব্যাটা আমার পাঞ্জাবীটা লম্বায় দুই ইঞ্চি বড় করে ফেলেছে।’

পরদিন সকালবেলায় গোপাল জিনিস-পত্র কেনা-কাটা করবার জন্যে বেরিয়ে গেল। তখন মায়ের মনে হলো, বেচারার পাঞ্জাবীটা দুই ইঞ্চি লম্বা হয়েছে। কেটে ঠিক করে দিলে হয় তো! তিনি কাউকে কিছু না বলে উপরে উঠে গেলেন এবং ছেলের ঘরে বসে পাঞ্জাবীটা নিচ থেকে দুই ইঞ্চি কেটে বাদ দিয়ে দিলেন। তারপর কাটা মুখটা সেলাই করে রেখে নিচে নেমে এলেন।

গোপালের বাড়িতে ছিল দুই বোন। গত রাত্রিতে খাওয়ার সময় দাদার মন্তব্য তারাও শুনেছিল। ওই রকম বেমানান লম্বা পাঞ্জাবী প’রে বিয়ে করতে গেলে দাদাকে দেখে সবাই হাসবে, এ জিনিস তাদের সবার অসহ্য মনে হল। কিন্তু কেউ কাউরে নিজেদের মনের কথা খুলে বলল না। কিছু পরে বড় বোন আবার দুই ইঞ্চি কেটে বাদ দিয়ে সেলাই করে দিল। তারপর ছোটবোনও চুপি চুপি ঘরে প্রবেশ করে পাঞ্জাবির ঝুল নিচ থেকে আরো দুই ইঞ্চি কেটে সেলাই করে দিল। এদের কাজ কেউই জানতে পারল না।

সন্ধ্যাবেলায় বিয়ের সাজ পরতে গিয়ে গোপালের চক্ষুস্থির যে পাঞ্জাবী দুই ইঞ্চি লম্বা ছিল, তা উলটে এখন চার ইঞ্চি খাটো কি ক’রে হলো, তা সে কিছুতেই বুঝতে পারল না। সে ঘোড়ার গাড়ি ডেকে দোকানে ছুটল এর কারণ জিজ্ঞাসা করতে। দোকানিকে জিজ্ঞাসা করাতে সে কিছুই বুঝতে পারল না। গোপাল রেগে মেগে দোকানীকে দু’চার কথা শুনিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে এলো।

বাড়ি এসে সকলের মুখে সব কথা শুনে গোপালের মেজাজ আরো খারাপ হলো। কিন্তু অন্যের উপর রাগ করে তো বিয়ে না করে থাকা যায় না। বাধ্য হয়ে গোপাল তাড়াতাড়ি বাজারে গিয়ে আবার আর একটা পাঞ্জাবী কিনে তাই পরে রেগে-মেগে বিয়ে করতে গেল।

মহাজনের টাকার থলি

ভদ্রলোক টাকার থলে সহ নৌকা করে নদীর ওপারে যাচ্ছিলেন। মাঝ নদিতে হঠাৎ করে নৌকাটা ডুবে যায়। তীরে গোপাল ও তার বন্ধুবান্ধবরা দাড়িয়ে ছিল তারা অনেক কষ্টে ভদ্রলোককে তীরে টেনে তুলতে সমর্থ হয়। নাহলে স্রোতের টানে তাঁকে অক্কা পেতে হত। কিন্তু মহাজনের ভারি টাকার থলিটি বর্ষার ভরা নদীতে কোথায় তলিয়ে গেল। গোপালরা জানতে পারল না।

ডাঙায় তোলার কিছু পর ভদ্রলোক জ্ঞান ফিরে পেয়ে গোপালদের গালাগাল করতে থাকেন। আমার নদি থেকে না ভুলেযদি টাকার থলেটি তুলতে পারতেন তবে বুঝতুম একটা বাহাদুরী কাজ করেছেন। আপনারা সব অকর্মার ঢেকি একদম অপদার্থ। এরূপ লোকদের দুচোখে দেখতে পারি না ইত্যাদি ইত্যাদি।

এসব শুনে গোপাল বলে, আপনাকে মানুষ ভেবে জান বাঁচিয়ে মহাদোষ করে ফেলেছি তাই আমরা ঢেকি। যদি আগে জানতাম আপনি অকৃতজ্ঞ জন্তু বিশেষ যার কাছে জানের চেয়ে টাকার থলি বড়, তাহলে আপনার ওই মাংসের ঢিবিকে আমরা স্পর্শও করতাম না। আপনি ঢোক ঢোক লোনা জল খেয়ে টাকার টুং টুং শব্দ শুনতে শুনতে ভবপারে যাওয়ার ঢং ঢং বাদ্যি এতক্ষণ শুনতেন। এই বলে সকলে সেখান থেকে রাগ করে চলে গেল।

গোপালের ভাইপো

গোপালের ভাইপো গোপালের মতোই সেয়ানা। তবে গোপালের মত বুদ্ধি করে এত পয়সা রোজগার করতে পারত না। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের আর্থিক আনুকুল্যে গোপাল পাকাবাড়ি তুলেছিল কিন্তু তার ভাইপোর পক্ষে তখনও পাকাবাড়ি তোলা সম্ভব হয়নি। কুঁড়েঘরেই বাস করতে হতো তাকে। লোক দেখানো বুদ্ধি কম থাকার জন্য পয়সা রোজগার করত কম। গোপাল একদিন তার পাকাবাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে গড়গড়া টানতে টানতে তার ভাইপোকে ডাক দিয়ে বলল, ওরে হাবু, এই অসময়ে বাড়ির ভেতর বসে কি করছিস রে? এদিকে আয় আমি ছাদে বসে আছি। তোকে একটা জিনিস দেখাব।

 গোপালের ভাইপো হাবু বাড়ির ভেতরেই ছিল। গোপালের ডাক শুনতে পেয়ও সেদিন বাড়ির বাইরে বেরোয়নি বা গোপালের ডাকে সাড়াও দেয়নি। কারণ সে বুঝতে পেরেছিল যে, তার কাকা তাকে সহসা ডাকে না; ভন পাকা বাড়ির প্রতি তার দৃষ্টি আকর্ষন করার জন্যই এখন ডাকাডাকি করছে। নইলে যে কাকা সচরাচর কোনও খোঁজ নেয় না, সে কেন দরাজ গলায় ডাকছে এই অসময়ে। গোপাল কাকার খোঁজ নেওয়ার কোন প্রযোজন ভাইপোর নেই-ভাইপো এই সিদ্ধান্ত মনে মনে নিয়ে নিঃসাড়ে চুপচাপ রইল। গোপালের কথায় কান দিলোনা বা ছাদে গেলও না।

 এই ঘটনার প্রায় দুবছর পরে গোপালের ভাইপো নিজের চেষ্টায় পাকাবাড়ি তৈরি করল অনেক কষ্টে টাকা রোজগার করে। তার নতুন পাকাবাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে সে গোপালকে বললে, ও গোপাল কাকা দুবছর আগে ছাদে দাঁড়িয়ে আমায় যেন কি বলেছিলে? তুমি আমার ছাদে এসো বলছি। গোপাল সেদিন বুঝতে পারল যে তার ভাইপো বোকা নয়-ভার মতই সেয়ানা হয়েছে দেখছি। নইলে দুবছর পরে কেউ আবার সাড়া দেয়? গোপাল তখন মনে মনে তারিফের হাসি হাসতে লাগল তার ভাইপোও বেশ সেয়ানা হয়েছে দেখে।

বিয়ের ঘটকালি

গোপাল একবার একটি বিয়ের ঘটকালি করে ছিল। মেয়েটি খোঁড়া, ছেলেটি কানা। কনেপক্ষ পাত্র পক্ষ গোপালের মুখের কথায় উপর নির্ভর করেই বিয়ে পাকাপাকি করে ফেলেছিল। কনেপক্ষ জানে না যে বর কানা, আবার পাত্রীপক্ষ জানে না যে মেয়ে খোঁড়া। গোপারের ভীষণ নাম ডাকের জন্য কেউ কাউকে অবিশ্বাস করতে পারে নি। সবকাজ গোপালের উপরই ছেড়ে দিয়েছে।

নির্বিঘ্নে বিয়ে হয়ে যাবার পর পাত্রকক্ষের কর্তা গোপালকে ডেকে বললেন, কনেপক্ষের লোকেরা জানতেই পারেনি যে, বর কানা। বরকে কানা দেখলে কোন বাপ মেয়েই দিত না। এর জন্য আপনার কাছে বেশ কৃতজ্ঞ আমরা। এই বলে পাত্রপক্ষের লোকেরা কিছু পুরষ্কার বাবদ টাকা দিল। গোপাল তা মুখটি চেপে নির্বিবঘ্নে তাদেরকে কিছু না বলে নিয়ে নিল।

এদিকে কন্যাপক্ষের লোক এল। মেয়েটি যে খোঁড়া পাত্রপক্ষের লোকেরা জানিতেই পারেনি, কি বল গোপাল! এই বলে কন্যাপক্ষের লোকেরা গোপালকে কিছু পুরষ্কার দিল।

দুপক্ষের কাছে মোটা বকসিস পেয়ে পুলকে গোপাল মনে মনে হাসতে হাসতে বলল, আপনারা মহাশয় ব্যক্তি। তাহলে সব কথা খুলে বলি শুনুন, আপনার মেয়েটি খোঁড়া আর বরও কানা। এতে অবশ্য দুপক্ষের চিন্তা ভাবনা করার কোনও কারণই নেই।

গোপালের কথা শুনে বর পক্ষের আক্কেল গুড়ুম। বললেন, অ্যাঁ, বলো কি। পাত্রী খোঁড়া? আগে এ কথা আমাদের বলেননি কেন?

গোপাল বললে, নইলে মানাবে কেন দাদা? না মানালে আমরাই যে বদনাম। আমি তো কারও কাছে বদনাম শুনতে রাজি নই। এখন, আপনাদের আর কারোর কিছু বলার থাকলো না।

দাবা খেলা

গোপাল মাঝে মাঝে কারও না কারোর সঙ্গে নিজের বাড়ির দাওয়ায় বসে দাবা খেলতো। গোপালের সঙ্গে দাবা খেলার জন্য প্রায়ই কেউ না কেউ দুই মাইল দূর থেকেও হেটে আসতেন। অন্ততঃ এক বাজি খেলতে না পারলে অথবা কারও সঙ্গে দাবায় হেরে গেলে গোপাল সে রাতে মোটেই ঘুমাতে পারতো না। সারারাত বিছানায় শুয়ে শুয়ে শুধু ছটফট করত। দাবা খেলায় ভীষণ নেশা গোপালের বলতে গেলে, দাবা খেলার সময় গোপাল বাহ্যজ্ঞানই হারিয়ে ফেলত। একদিন গোপাল দাবা খেলছিল, আর এক চাল দিলেই কিস্তিমাত হয় আর কি?

এমন সময় বাড়ি থেকে একটা চাকর ছুটে এসে খবর দিলে, বাবু তাড়াতাড়ি বাড়ি চলুন। কর্তা মাকে সাপে কামড়েছে। কর্তামা ভীষণ কষ্ট পাচ্ছেন। ডাক্তার আনতে হবে।

গোপাল তখন দাবার নেশায় এমনই মত্ত যে চাল দিতে দিতে চাকরকে বললে, কাদের সাপ? কার হুকুমে কর্তা মাকে কামড়াল? সাপটার বিরুদ্ধে রাজার দরবারে নালিশ ঠুকে দিয়ে, এখনি ছুটে চলে যা একটু পরেই আমি যাচ্ছি।

চাকর বেচারা কর্তাবাবুর কথা শুনে হা করে দাড়িয়ে রইল।

আরও দেখুনঃ

জাতীয় পশু বাঘ রচনা 

বনভোজন রচনা

বন্ধুকে চিঠি লেখার নিয়ম 

ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণের অভিজ্ঞতা জানিয়ে বন্ধুকে চিঠি

Leave a Comment