বায়ুমণ্ডল কাকে বলে?
ভূপৃষ্ঠ থেকে কয়েক হাজার কিলোমিটার ওপর পর্যন্ত বিস্তৃত যে গ্যাসীয় আবরণ পৃথিবীকে ঘিরে রয়েছে, তাকে বায়ুমণ্ডল (atmosphere) বলে। শিলামণ্ডল ও বারিমণ্ডলের মতো বায়ুমণ্ডল পার্থিব পরিবেশের অবিভাজ্য অংশ। মাধ্যাকর্ষণ শক্তির আকর্ষণে ভূ-পৃষ্ঠের সঙ্গে এই গ্যাসীয় আবরণ সংযুক্ত হয়ে রয়েছে।
বায়ুমণ্ডলের স্তরভেদ
বায়ুমণ্ডলের ছয়টি স্তর রয়েছে সেগুলি সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হল।
ট্রপোস্ফিয়ার
বায়ুমণ্ডলের সর্বনিম্ন স্তরে যেখানে আমরা বাস করি তাহাকে ট্রপোস্ফিয়ার বলে। ট্রপোস্ফিয়ারের উচ্চতা বিষুবরেখায় ১৬ কিমি এবং মেরুপ্রদেশে ৮ কিমি, কারণ বিষুবরেখা অঞ্চলে পৃথিবীপৃষ্ঠ উষ্ণতর এবং প্রতি কিমি উচ্চতায় 6.4°C হারে উষ্ণতা হ্রাস পায় যাহাকে বলা হয় স্বাভাবিক উষ্ণতা হ্রাসের হার। এই স্তরে অধিকাংশ জলীয় বাষ্প, সমস্ত ধূলিকণা এবং কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস বিরাজমান থাকে। এই কারণে বায়ু প্রক্রিয়াসমূহ যথা—ঘনীভবন, অধঃক্ষেপন, ঝড় ও বৃষ্টিপাত ইত্যাদি হইয়া থাকে। ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বে যে বায়ুস্তর থাকে তাহাকে বলা হয় স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার। ট্রপোস্ফিয়ার আর স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের বিভাজন রেখাকে ট্রপোপজ বলা হয়।
স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার
এই স্তরে যতই ঊর্ধ্বে যাওয়া যায় ততই উষ্ণতা হ্রাস না পাইয়া বরং বাড়িয়া যায় যাহাকে বলে উষ্ণতার বৈপরীত্য (Temperature Inversion) এই স্তর ৫০ কিমি পর্য্যন্ত বিস্তৃত। প্রতি ১৬৫ মিটার উচ্চতা বৃদ্ধিতে ১° তাপমাত্রা হ্রাস পায়। ট্রপোপজ এ উষ্ণতা – ৬০°C থেকে বৃদ্ধি পেয়ে স্ট্র্যাটোপজ হয় ০°C। যেহেতু এই স্তরের বায়ু নিশ্চল, ইহা মেঘশূন্য ও বৃষ্টিহান। সেহেতু জেট বিমানগুলি স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের মধ্য দিয়ে অনায়াসে যাতায়াত করিতে পারে। আরও জলীয় বাষ্পের অনুপস্থিতি মেঘ সৃষ্টিতে বাধা পায় এবং সে কারণে দৃশ্যমানতা ভাল হয়। ওজোন স্তর অবস্থান করে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে এবং ওজোনের এই স্তরকে ওজোনোস্ফিয়ারও বলা হয়। ওজোন সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মিকে শোষণ করিয়া থাকে। স্ট্যাটোপজ মেসোস্ফিয়ার থেকে আলাদ করেছে।
মেসোস্ফিয়ার
এই স্তরটি হল বায়ুমণ্ডলের শীতলতম স্তর, যেখানে উচ্চতা বাড়ার সাথে সাথে তাপমাত্রা কমতে থাকে। এই স্তরের সবচেয়ে কম তাপমাত্রা হল (−১০০°C)। ৮০ কিমি উচ্চতায় তাপমাত্রা ০°C থেকে কমতে কমতে – ১০০ °C তাপমাত্রায় পৌঁছায় প্রায় সব উা পিশু, যেগুলি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ঢুকে পড়ে তার পৃথিবী পৃষ্ঠে পৌঁছানোর আগেই এই স্তরে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। মেসোপজ এই স্তরটিকে আয়নস্ফিয়ার থেকে আলাদা করেছে।
থার্মোস্ফিয়ার বা আয়নস্ফিয়ার
ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ৮৫ কিমি— ৬০০ কিমি পর্যন্ত বায়ুস্তরে ইহা অবস্থিত। এই স্তরে উচ্চতা বাড়লে তাপমাত্রাও বাড়তে থাকে। দিনের বেলা এই স্তরের তাপমাত্রা ১৫০০°C হয়ে যায়। কিন্তু বায়ুমণ্ডলের চাপ খুব কম থাকায় খুব গরম অনুভূত হয় না। দিনের বেলায় ৬০০ কিমি উচ্চতায় তাপমাত্রা ১৪০০°C ছাড়িয়ে যায়। আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র (International Space Station) টি এই স্তর দিয়ে তার কক্ষপথে পৃথিবীকে আবর্তন করে।এই স্তরে রেডিও তরঙ্গ প্রতিফলিত হয়ে পুনরায় ভূপৃষ্ঠে ফিরে আসে এবং ইহা বেতার যোগাযোগ ব্যবস্থায় সাহায্য করে।
এক্সোস্ফিয়ার
এটি বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে বাইরের স্তর। এটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ও মহাশূন্যের মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী স্তর। এই স্তরের উপরের অংশকে ম্যাগনেটোস্ফিয়ার বলে। বায়ুমণ্ডলের এই অঞ্চলটি ৯০০ কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত।
ম্যাগনেটোস্ফিয়ার
উচ্চতা আনুমানিক ১,০০০ কিমি থেকে শুরু, ঊর্ধ্বসীমা অনির্দিষ্ট। বিসমমণ্ডলের ওপর বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ চলছে। আলোচ্য স্তরের বেতার তরঙ্গ প্রতিফলিত করার প্রাকৃতিক সুবিধাকে মানব কল্যাণে ব্যবহার করার কাজ শুরু হয়েছে। আশা করা যায়, আরও বিশদ অনুসন্ধানের ফলে সম্পদ সৃষ্টি বা সম্পদের ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিসমমণ্ডল কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করবে।
আরও দেখুনঃ
FAQ:-বায়ুমণ্ডল
1. বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তর গুলি কি কি?
বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তর গুলি হল- ট্রপোস্ফিয়ার, স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার, মেসোস্ফিয়ার, থার্মোস্ফিয়ার বা আয়নস্ফিয়ার, এক্সোস্ফিয়ার, ম্যাগনেটোস্ফিয়ার।
2. বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তর কোনটি?
বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তর ট্রপোস্ফিয়ার।
3. বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ কত?
বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ প্রায় ৭৮% ।
4. ওজন স্তরের সবচেয়ে ক্ষতিকর গ্যাস কোনটি?
ওজন স্তরের সবচেয়ে ক্ষতিকর গ্যাস CFC বা ক্লোরোফ্লুরোকার্বন।
5. বায়ুমন্ডলের সর্বোচ্চ স্তর কোনটি?
বায়ুমন্ডলের সর্বোচ্চ স্তর ম্যাগনেটোস্ফিয়ার।