কন্যাশ্রী প্রকল্প রচনা। Kanyashree prakalpa in Bengali

কন্যাশ্রী প্রকল্প পশ্চিমবঙ্গের একটি দৃষ্টান্ত মূলক প্রকল্প। এর  দ্বারা বহু মেয়ে খেলাধুলায়, স্বনির্ভর ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাসী হয়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে। কন্যাশ্রী প্রকল্প রচনা নিচে সুন্দর ভাবে বর্ণনা করা হল।

ভূমিকা

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কন্যাশ্রী প্রকল্প আজ বিশ্ববন্দিত জনকল্যাণমূলক প্রকল্প। সুদূর প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে কন্যা সন্তানের প্রতি অবহেলা ভারতীয় সংস্কৃতিতে বদ্ধমূল হয়ে রয়েছে। বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে বর্তমান কালে সেই অবহেলার স্বরূপ অনেকটা স্তিমিত হলেও দরিদ্র মানুষদের মধ্যে আর্থ সামাজিক কারণে কন্যা সন্তানের প্রতি তুলনামূলকভাবে অবহেলা সমূলে বিনষ্ট হয়নি। আর তা হয়নি বলেই পশ্চিমবঙ্গ সরকার কন্যাশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের কন্যা সন্তানের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করতে এবং বাল্যবিবাহ বন্ধ করে কন্যা সন্তানদের বিদ্যালয়মুখী করতে এবং তাদের সম্মানজনক পেশায় প্রতিষ্ঠিত করে সামাজিক মর্যাদায় ভূষিত করতে ‘কন্যাশ্রী প্রকল্প’ শুরু করেন।  

উদ্দেশ্য

এই প্রকল্পের পরাক্ষে উদ্দেশ্য বহুমুখী হলেও প্রত্যক্ষ উদ্দেশ্য কিন্তু দ্বিবিধ—মেয়েদের বাল্যবিবাহ রাধে করা এবং তাদের মেধার বিকাশের জন্য বিদ্যালয়মুখী করা। শুধু তাই নয়, শিক্ষাক্ষেত্রে যে ‘স্কুল ছুট’ -এর সংখ্যা বাড়ছে তার। গতিরাধে করাও এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য। সর্বোপরি সমাজের সর্বাঙ্গীন অগ্রগতিতে মেয়েদেরকে সামিল করতে ও সামাজিক স্থিতিশীলতা এবং ভারসাম্য বজায় রাখতে এই প্রকল্পের জুড়ি মেলা ভার।

 লক্ষ্য

এই প্রকল্পের লক্ষ্য অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পাঠরতা ছাত্রীদের যাদের বয়স ১৩ থেকে ১৮-র মধ্যে তাদেরকে বছরে পাঁচশত টাকা অনুদান দেওয়া হবে।

কন্যাশ্রী প্রকল্পের সুবিধা

 কন্যাশ্রী প্রকল্প ২০১৩ সালে ৮ ই মার্চ সমাজে মহিলাদের উন্নয়নের উদ্দেশ্যে প্রচলন করা হয়। যে সকল ছাত্রীর বয়স ১৩ থেকে ১৮ বছর তারা কন্যাশ্রী K1-এর জন্য আবেদন করতে পারবে এবং প্রতি বছর ৭৫০ টাকা করে পাবে। যে সমস্ত ছাত্রার বয়স ১৮ থেকে ১৯ বছর এবং কলেজ পড়ুয়া, তারা কন্যাশ্রী K2-এর আবেদন করতে পারবে এবং এককালীন ২৫,০০০ টাকা সরকারি অনুদান পাবে। যে সকল পড়ুয়া কোন কলেজ অথবা ইউনিভার্সিটি থেকে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন (PG) কোর্স করছে তারাও কন্যাশ্রী K3 স্কিমের জন্য আবেদন করতে পারে। কন্যাশ্রী K3 স্কিমের আওতায় বিজ্ঞান বিভাগে ছাত্রীরা প্রতি মাসে ২,৫০০ টাকা এবং কলা ও বাণিজ্য বিভাগের ছাত্রীরা প্রতি মাসে ২,০০০ টাকা করে স্কলারশিপ পাবে।

সাফল্য

১৪ই আগস্ট, ২০১৮ কণ্যাশ্রী প্রকল্পের সফলতা ৫ম বর্ষ অতিক্রম করে, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সবকটি জেলাতে কণ্যাশ্রী প্রকল্পের সাফল্য দিবস পালিত হয়। এবং বর্তমানে কন্যাশ্রী বিশ্বশ্রী রূপে ভূষিত হয়েছে।

নিদৰ্শন

ইতিমধ্যে কন্যাশ্রী প্রকল্পকে কেন্দ্র করে কন্যাশ্রী সংঘ গঠিত হয়েছে জেলায় জেলায় – যার দ্বারা দুদিক দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। এর  দ্বারা বহু মেয়ে খেলাধুলায়, স্বনির্ভর ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাসী হয়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে।

কণ্যাশ্রী দিবস

সমগ্র রাজ্য জুড়ে এই প্রকল্পটি উন্নীত করার জন্য ১৪ই আগস্ট কণ্যাশ্রী দিবস হিসাবে উদযাপন করা হয়। ১৪ই আগস্ট, ২০১৩ তারিখ রাজ্যের ব্যাপক অনুষ্ঠানগুলি প্রকল্পটি প্রচারের জন্য অনুষ্ঠিত হয়। কলকাতায় এই অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাপতিত্ব করেন। জেলাগুলিতে সরকার দ্বারা সচেতনা প্রচারের জন্য আয়োজন করা হয়েছিল।

আন্তর্জাতিক সম্মান

রাষ্ট্রসংঘ কর্তৃক এই প্রকল্প সমাজকল্যাণকর প্রকল্প হিসেবে প্রথম স্থান পেয়েছে। ইউনাইটেড নেশনস WSIS-16 পুরস্কার ছাড়া লন্ডনে (২০১৪) ইউনিসেফ কর্তৃক তা প্রশংসিত হয়েছে। গত ২৩ জুন, ২০১৭ তারিখে নেদারল্যান্ডে রাষ্ট্রসংঘের আয়োজিত অনুষ্ঠানে ৫৫২টি সমাজকল্যাণকর কাজের মধ্যে (৬২টি দেশের) পশ্চিমবাংলার কন্যাশ্রী প্রকল্পের জন্য মুখ্যমন্ত্রী যখন প্রথম পুরস্কার গ্রহণ করলেন তখন তাঁর সঙ্গে সমস্ত পশ্চিমবঙ্গবাসী নিজেদেরকে গর্বিত বোধ করেছেন।

উপসংহার                                                                                                                                                            

আমরাও এর সুফলের দিকে তাকিয়ে থাকব। কন্যা সন্তানরা আগামী দিনে সমাজে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে এবং স্বনির্ভর হয়ে দেশের সম্পদ হয়ে উঠবে-এই প্রত্যাশা করবো।

বিশ্ব উষ্ণায়ন প্রবন্ধ রচনা

FAQ : কন্যাশ্রী প্রকল্প

1. কন্যাশ্রী প্রকল্প কত সালে চালু হয় ?

২০১৩ সালে ৮ই মার্চ কন্যাশ্রী প্রকল্প চালু হয়।

2. কন্যাশ্রী প্রকল্পের লক্ষ্য কি?

এই প্রকল্পের লক্ষ্য অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পাঠরতা ছাত্রীদের যাদের বয়স ১৩ থেকে ১৮-র মধ্যে তাদেরকে বছরে পাঁচশত টাকা অনুদান দেওয়া হবে।

3. কন্যাশ্রী প্রকল্প বয়স কত হতে হবে?

কন্যাশ্রী প্রকল্পের জন্য বয়স ১৩-১৮ বছর হতে হবে।

আরও দেখুনঃ

বিজ্ঞান ও কুসংস্কার রচনা

এ পি জে আব্দুল কালাম প্রবন্ধ রচনা

Leave a Comment