নমস্কার বন্ধুরা, আমরা আজ তোমাদের জন্য কিছু অসাধারন শিক্ষনীয় গল্প নিয়ে একটি পোস্ট প্রস্তুত করেছি। গল্প গুলি অব্যশই তোমাদের ভালো লাগবে তাই সমস্ত শিক্ষনীয় গল্প গুলি পড়ার অনুরোধ রাখছি। এছাড়া সমস্ত গল্পগুলি PDF আকারে দেওয়া হল চাইলে ডাউনলোড করে নিতে পারেন।
প্রকৃত বন্ধু
দুই বন্ধু ছিল। দু’জনেরই গলায় গলায় বন্ধুত্ব ছিল। একদিন তারা বেড়াতে বেরিয়েছিল। বেড়াতে বেড়াতে তারা এক জঙ্গলের কাছে এসে পড়ল আর দুই বন্ধুকে দেখে একটা ভালুক সেই জঙ্গলটা থেকে হঠাৎ বেরিয়ে এল। দুইবন্ধু ভালুকটাকে দেখে খুব ভয় পেয়ে গেল। দু’জনের মধ্যে একজন চট্পট একটা গাছে উঠে লুকিয়ে পড়ল । অপর বন্ধুটি গাছে ওঠা জানতো না। ভয়ে তার প্রাণ শুকিয়ে গেল। তার বন্ধুটি তার কথা না ভেবে নিজের প্রাণ বাঁচাতে গাছে উঠে পড়েছিল। এখন তাকে নির্ঘাৎ ভালুকের হাতে প্রাণ হারাতে হবে। অগত্যা তার আর কোনো উপায় নেই দেখে মরার ভাণ করে সে মাটিতে শুয়ে পড়ল। কারণ সে শুনেছিল ভালুকরা না কি মরা মানুষ ছোঁয় না। ভালুক এবার মাটিতে শোওয়া লোকটির কাছে এসে গেল। লোকটি তখন নিঃশ্বাস বন্ধ করে মরার মত সেখানে পড়ে রইল। ভালুকটি কিছুক্ষণ শোঁকার পর লোকটাকে মরা মনে করে সেখান থেকে চলে গেল । ভালুকটা চলে যেতেই যে বন্ধুটি গাছে উঠে লুকিয়েছিল সে গাছ থেকে নেমে এসে বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করলে, ভালুকটা তোমার কানে কানে কী যেন বলে গেল, কী বললো ভাই? বন্ধুটি চট্পট্ উত্তর দিল, ও বলে গেল, যে বন্ধু তোমাকে বিপদের মুখে ফেলে পালায়, তাকে আর কোনোদিন বিশ্বাস কোরো না। তার সঙ্গে বেড়াতে বেরিও না।
উপদেশ : বিপদেই প্রকৃত বন্ধুর পরিচয় পাওয়া যায়।
ধৈর্যের ফল
একদা এক গ্রামে এক পাতিশিয়াল বাস করতো। কিছুদিন খাবার না পেয়ে পেয়ে শেয়ালের পেটটা এক্কেবারে চুপসে গেল। একদিন সে বাধ্য হয়ে খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ল। পথে যেতে যেতে হঠাৎ তার চোখে পড়ল একটা ওক গাছের খোড়লে বেশ কিছু রুটি আর মাংস রাখা আছে। রাখাল বালকদের কেউ হয়ত পরে খাবে বলে রেখে দিয়েছে। পাতিশেয়ালটা ঐ খাবার দেখেই খোড়লের ভেতর ঢুকে পড়ল। আর গপ গপ করে খাবারগুলো সব চেটেপুটে খেয়ে নিল। ফলে তার চোসানো পেটটা হয়ে উঠল দারুণ মোটা। এবার সে আর খোড়ল থেকে বেরোতে পারল না। অনেক চেষ্টা করেও বেরোতে না পেরে সে কেঁউ কেঁউ করে কাঁদতে লাগল । পথ দিয়ে তখন আর একটা শেয়াল যাচ্ছিল। যেতে যেতে খোড়লে পড়া শেয়ালকে কেঁউ কেঁউ করে কাঁদতে দেখে বলল – কি হল ভাই, তোমার? তুমি কেঁউ কেঁউ করছ কেন? খোড়লে আটকে পড়া পাতিশেয়ালটা তখন তার মুশকিলের কথা তাকে খুলে বলল। তখন পথচারী শেয়ালটা বলল, ওঃ তাই বুঝি! তা একটু সবুর কর, পেট তোমার আবার আগেকার মত শুকনো হয়ে যাবে। তখন অনায়াসে তুমি ঐ খোড়ল থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে।
উপদেশ : ধৈর্য ধরে থেকে সমস্যার সমাধান করতে হয়।
অভিজ্ঞতা
একদা এক মাঠের পাশে একটা খাবার বাড়ি ছিল। খাবার বাড়ির সামনে একটা কুকুর ঘুমাচ্ছিল। তাকে ঐরকমভাবে ঘুমোতে দেখে পা টিপে টিপে এক নেকড়ে এগিয়ে এল তাকে ধরে খাওয়ার জন্য। কুকুরটা ততোক্ষণে জেগে গেছে। নেকড়েটা সবে তার গায়ে কামড় বসাতে যাচ্ছে এমন সময় কুকুরটা একলাফে তার থেকে কিছুটা দূরে সরে গিয়ে বলল–শোন একটা ভাল কথা তোমাকে বলি । আমাকে এখন খেয়ে তোমার তেমন সুবিধে হবে না! আমি বড্ড রোগা হয়ে গেছি। পেটে বহু দিন ভালমন্দ পড়েনি। তাই আমাকে খেয়ে তোমার পেটও ভরবে না। আমার মালিকের বাড়িতে আজ মহাভোজ হবে, আর সেই ভোজের খাবার খেয়ে একটু মোটাসোটা হয়ে নিই আমি। তারপর এসে আমাকে খেও, তাতে মজা পাবে, পেটও বেশ ভরবে তোমার। কুকুরের এই কথা শুনে নেকড়ে তখন আর তাকে না খেয়ে চলে গেল। পরদিন কুকুরের ভোজ খাওয়া হয়ে গেছে ভেবে আবার সেই নেকড়ে এল। এসে দেখল কুকুরটা খামার বাড়ির ছাদের ওপর নাক ডাকিয়ে ঘুমোচ্ছে। সে তখন কুকুরটাকে ডেকে বলল – আমি এসে গেছি, এবার তুমি নেমে এস। আমাদের চুক্তিমত কাজ কর। কুকুরটা তখন হাসতে হাসতে বলল, নিচে মাটিতে ঘুমন্ত অবস্থায় যদি আমাকে আবার কোনোদিন খেতে আস তাহলে আমার ভোজ খাওয়া পর্যন্ত আর অপেক্ষা করতে যেও না ।
উপদেশ : অভিজ্ঞ লোকেরা বিপদে পড়ে বুদ্ধির জোরে রক্ষা পায় ।
বিশ্বাস ঘাতকদের মরাই ভাল
এক ছিল পাখি শিকারী। পাখি শিকারীটির বাড়িতে একদিন এক অতিথি এল। অতিথিকে খেতে দেবার মত সেদিন পাখি শিকারীর বাড়িতে কোনো পাখি অবশিষ্ট ছিল না। সে তার পোষা তিতির পাখিটাকেই তাই জবাই করার জন্যে নিয়ে এল। তিতিরটা তখন তাকে তিরস্কার করে বলল – তুমি এত বড় নিমকহারাম আগে তা জানতাম না। এতদিন অন্যসব পাখিদের ভুলিয়ে ভালিয়ে তোমার ফাঁদে এনে ফেলতাম আর তুমি কি না আজ আমাকেই জবাই করতে যাচ্ছো? পাখি শিকারী লোকটি উত্তর দিল, এই জন্যে তো, মানে স্রেফ এই কারণেই তো তোমার শাস্তি হওয়া উচিত। কারণ, তোমার জাত-ভাইদের ওপরেও তোমার কোনও মায়া-দয়া নেই ।
উপদেশ : নিমকহারামেরা সকলের কাছেই ঘৃণ্য হয় ।
বুদ্ধিবল
এক যে ছিল কুকুর। আর ছিল এক মোরগ। দুইজনের গলায় গলায় বন্ধুত্ব ছিল দুই বন্ধু একসঙ্গে দেশ ভ্রমণে বেরিয়েছিল। পথে যেতে যেতে রাত্রি হয়ে গেল। আর রাত হতেই তখন মোরগটা এক গাছের ওপরে একটা ভাল ডাল বেছে নিয়ে ঘুমোতে গেল। আর কুকুরটা? কুকুরটা রইল ঐ গাছেরই গোড়ায় এক বড়সড় গর্তে। দু’জনেই ঘুমিয়ে পড়ল। এদিকে ভোর হয়ে আসছে। মোরগ তার অভ্যাস মত কোঁকর কোঁক করে ডেকে উঠল। সেই ডাক শুনে এক খেঁকশিয়ালীর বড় লোভ হল। একটু দূরেই সে তার ছানাপোনা নিয়ে বাস করতো। মোরগের ডাক শুনে সে এগিয়ে এল সেই গাছের তলায়। তারপর খেঁকশিয়ালী গাছের ডালের দিকে চেয়ে মোরগকে মিষ্টি করে বলল, সত্যিই কি সুন্দর গলা তোমার, শুনে বুকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে, নেমে এসো, আমি তোমায় আলিঙ্গন করি । এই কথা শুনে মোরগটিও মিষ্টি করে বলল, এই গাছের নিচে আমার দারোয়ান ঘুমোচ্ছে, তাকে আগে জাগাও, সে উঠে দরজা খুলে দিক, তখন আমি নিচে নামতে পারব। খেঁকশিয়ালী তখন কেবলই খুঁজছিল, কোথায় সেই দারোয়ান, কাকে দরোজা খোলার কথা বলতে হবে, অমনি কুকুর উঠে এক লাফে খেঁকশিয়ালীর ঘাড় চেপে ধরল। তারপর তাকে কামড়ে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলল।
উপদেশ : দুর্বলেরা সবলের সাহায্য নিয়ে অতি সহজেই শত্রু দমন করতে পারে ।
নিজের দোষ অপরের ঘাড়ে চাপাতে গেলে
একদা এক দেশে এক ডাকাত ছিল। সে একবার একটা লোককে খুন করে ফেলল। আশেপাশের লোকেরা ডাকাতটাকে ধরতে গেলে সে ছুটে পালিয়ে গেল। পথে যে সব লোক ডাকাতটার সামনে পড়ল তারা যখন তাকে জিজ্ঞাসা করল, তোমার হাতে ঐ লাল লাল দাগ কীসের? ডাকাতটি চপপট উত্তর দিল—ও, কিছু না! এইমাত্র আমি তুঁতগাছ থেকে নেমে এলাম কিনা তাই! যে লোকগুলো তার পিছু পিছু ধাওয়া করে আসছিল তারা ততোক্ষণে সেখানে পৌঁছে গেল। অতএব ডাকাতটা আর পালাতে পারল না। তারা তার দেহে একটা ধারাল গোঁজ পুঁতে | তাকে তুঁতগাছ ঝুলিয়ে দিল! তুঁতগাছটি তখন মৃত্যু পথযাত্রী ডাকাতকে বলল – তোমাকে মৃত্যু দণ্ড দিতে সাহায্য করার জন্যে আমার কিছুমাত্র আফসোস নেই, কারণ নিজে খুন করে হাতের রক্ত তুমি আমার গায়ের রক্ত হিসেবেই চালাতে চেয়েছিলে।
উপদেশ : ভাল লোকের গায়ে কাদা ছিটোতে গেলে সেও তোমায় ছেড়ে কথা বলবে না।
বুঝতে পারিনি
একদা এক ডাঁশ ছিল। সে একদিন উড়ে এসে বসল এক ষাঁড়ের শিং-এর উপর। কিছুক্ষণ সেখানে বসে থাকবার পর ডাঁশটি ষাঁড়কে বলল—ভাই, তোমার শিং-এ আমি অনেকক্ষণ ধরে বসে আছি, তোমার কষ্ট হচ্ছে না তো? আমি কি এখন উড়ে চলে যাব? ষাঁড়টি তখন গম্ভীর স্বরে বলল – কে তুমি? আর কখনই বা তুমি আমার শিং এর ওপরে এসে বসেছো? টের পাইনি তো! উপদেশ : তুচ্ছ ব্যক্তিদের থাকা না থাকায় কিছুই যায় আসে না।
একমনে কাজ করতে হয়
একদা এক মাঠে একদল ভেড়া চরে বেড়াচ্ছিল। ভেড়ার পাল বিকেল হতেই বাড়ি ফেরার জন্যে এগিয়ে চলছিল। বেড়ার পাল অনেকটা এগিয়ে গেল কিন্তু একটি ভেড়ার ছানা দলের অনেক পেছনে পড়ে গেল। একটা নেকড়ে বাঘ এই অবস্থায় ভেড়ার ছানাটিকে দেখতে পেয়ে নিঃশব্দে তার পিছু নিল। বাচ্চা ভেড়াটা নেকড়েটাকে দেখতে পেল। সে বলল – বুঝেছি তুমি আমাকে ধরে খেতে চাও, এই তো? কিন্তু একটা শর্ত আছে আমার। মরবার আগে আমি বাঁশির সুরের সঙ্গে নাচতে চাই। তাই আমার অনুরোধ, তুমি বাঁশি বাজাও আমি তালে তালে নাচি। তারপর— নেকড়ে ভেড়ার ছানার এই কথা শুনে বাঁশি বাজাতে লাগল আর তার সঙ্গে চললো বাচ্চা ভেড়াটার নাচ আর সেই বাজনা আর নাচের আওয়াজ শুনে সেখানে একদল কুকুর এসে জুটল। নেকড়েকে দেখেই তারা তার দিকে ধাওয়া করল। নেকড়ে ছুটতে ছুটতে কোনোমতে কুকুরদের হাত থেকে বাঁহল । তারপর অনেক দূরে যখন কুকুরদের নাগালের বাইরে চলে এল তখন এক জায়গায় বসে বিশ্রাম করতে করতে ভাবতে লাগল, খুব শিক্ষা হল আমার, কেমন বুন্ধুর মত আমি শিকার করতে এসে বাঁশি বাজাতে গেছিলাম।
উপদেশ : একমনে কাজ না করলে কাজ পণ্ড হয়। বিপদও হতে পারে।
নতি স্বীকার
একদা এক বনে জলপাই গাছ আর নলখাগড়ার গাছ ছিল। একদিন ওদের মধ্যে খুব তর্ক শুরু হল। তর্কের বিষয় ছিল কার শক্তি এবং সহ্যগুণ বেশি তাই নিয়ে। জলপাইগাছ নলখাগড়াকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে বলছিল—তুই আর মুখ নেড়ে কথা বলিস না। তোর গায়ের জোর আমার খুব জানা আছে। একটু বাতাস বইলেই তো তুই নুয়ে পড়িস। নলখাগড়া গাছ এ কথার কোনো জবাব দিল না। একটু পরেই উঠল প্রচণ্ড ঝড়। নলখাগড়া নুয়ে পড়ে পড়ে, ঝড়ের ঝাপটা এড়িয়ে যেতে লাগল। আর জলপাই গাছ দাঁড়িয়ে ঝড় রুখতে গিয়ে তার দাপটে হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ল ।
উপদেশ : শক্তিশালীর কাছে নতি স্বীকার দোষের নয় ।
ভাবিয়া করিও কাজ
এক যে ছিল রাখাল। রাখালের একবার একটা বাছুর হারিয়ে গেল। বাছুরটাকে কোথাও খুঁজে খুঁজে পাওয়া গেল না। অবশেষে বাধ্য হয়ে রাখাল দেবতা জিউসের কাছে মানত করল। “হে ঠাকুর! আমার বাছুর যে চুরি করেছে তাকে যদি পাই তাহলে তোমার কাছে একটা পাঁঠা বলি দেব। একটু পরেই রাখাল দেখতে পেল বনের ভিতর একটা সিংহ তার বাছুরটা মেরে খাচ্ছে! সঙ্গে সঙ্গে রাখাল তার দুই হাত আকাশের দিকে তুলে বলে উঠল—দোহাই প্রভু জিউস, আমার বাছুর চোর ধরবো বলে, আগে তোমার কাছে একটা পাঁঠা মানত করেছিলাম। সে চোরের দেখা মিলল আমার, এবার তুমি আমায় ঐ চোরের থাবা থেকে বাঁচাও। তোমার বেদীতে আমি একটা ষাঁড় বলি দেব।
উপদেশ : ভেবেচিন্তে ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করতে হয়।
একতা
এক যে ছিল চাষী। তার অনেকগুলি ছেলে ছিল। আর ছেলেরা সকল সময় নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করত। এতে চাষীর মনে খুব দুঃখ হতো। চাষী এ ব্যাপারে ছেলেদের অনেক বোঝাতো এবং মাঝে মাঝে বকাঝকাও করত। কিন্তু কিছুতেই কিছু হল না । কোনো পরিবর্তন হল না ছেলেদের। এদিকে চাষী একদিন বৃদ্ধাবস্থায় উপস্থিত হল। চাষী তখন একদিন অনেক ভেবেচিন্তে ছেলেদেরকে বলল – তোরা যে কয়জন আছিস সবাই মিলে এক একটা কঞ্চি এনে তাই দিয়ে একটা আঁটি বেঁধে আন্ তো আমার কাছে। বাবার কথায় ছেলেরা প্রত্যেকেই কঞ্চি যোগাড় করে তাই দিয়ে একটা আঁটি বেঁধে আলো । এবার চাষীটি তার ছেলেদের বলল—এখন তোরা প্রত্যেকে এককভাবে এই আঁটিটা ভাঙতে চেষ্টা কর দেখি। কে পারিস আগে? বাবার কথায় ছেলেরা একে একে সেই কঞ্চির আঁটিটা ভাঙতে চেষ্টা করল। কিন্তু কেউই আঁটি ভাঙতে পারল না। বাবা এবার ছেলেদের বলল – এবার খুলে ফেলতো আঁটিটা। আর প্রত্যেকেই এক-একটি কঞ্চি হাতে নে। বাবার কথায় এবার ছেলেরা আঁটি খুলে প্রত্যেকেই একটি করে কঞ্চি বার করে নিল । চাষীটি এবার বলল—এখন নিজের নিজের হাতের কঞ্চিটা ভেঙে ফেলত । এই কথা শোনা মাত্রই ছেলেরা প্রত্যেকে নিজের নিজের হাতের কঞ্চি পটাপট করে ভেঙে ফেলল । চাষী এবার তার ছেলেদের উদ্দেশ্যে বলল—দেখলি তো! তোরা যদি এমন মিলে-মিশে একজোট হয়ে থাকিস তাহলে কোনো শত্রুই তোদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না । আর যদি তোরা পরস্পর কেবলই ঝগড়া-বিবাদ করিস, আলাদা হয়ে থাকিস, একের বিপদে অন্য সবাই তাকে সাহায্য না করিস, তাহ’লে এবার বুঝতেই তো পারছিস্ কেমন করে শত্রুর দল তোদের ঘায়েল করে দেবে!
উপদেশ : ঐক্যবদ্ধাবস্থায় ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
গোবর গণেশ
জিউসের মানুষ গড়া হয়ে গেল। হারমিকে জিউস বললেন এদের মগজে কিছু বুদ্ধি ঢোকাবার ব্যবস্থা কর। হারমিস তখন বুদ্ধি মাপার যন্ত্র নিয়ে, ক্ষুদ্রাকার মানুষের মগজে মেপে মেপে বুদ্ধি ঢালতে লাগলেন। ফলে মানুষরা হয়ে উঠল বুদ্ধিমান, জ্ঞানী। ঢালতে ঢালতে পাত্রটা যখন একেবারে শূন্য হয়ে গেল তখন বিশালাকায় কয়েকজন তখনও বাকি আছে। কিন্তু এখন কি হবে? বুদ্ধির পাত্র যে একেবারে শূন্য! তাই তাদের আর কিছুই দেওয়া সম্ভব হল না। তাই তারা বুদ্ধিহীন ও মূর্খ হয়ে রইল। দৈত্যরা তাই হল গোবর গণেশ।
উপদেশ : চেহারা বিশাল হলেই যে বুদ্ধি বেশি হবে—এ ধারণা একেবারেই ভুল।
বিপদে পড়লে
অনেকগুলি যাত্রী নিয়ে একটা জাহাজ ছাড়ল। জাহাজটা বেশ চলছিল। কিন্তু কিছুদূর যাবার পরে ভীষণ ঝড় উঠল সমুদ্রে, জাহাজ এই বুঝি ডুবে যায় । ভয়ে যাত্রীরা সব নিজেদের জামাকাপড় ছিঁড়ে নিজের নিজের ধর্মের দেবতাদের কাছে মানত করতে লাগল, ঠাকুর রক্ষা কর, ঝড় থামিয়ে আমাকে বাঁচাও, তোমায় খুশি করে নানা উপচারে পূজা দেব। ঝড়ের দাপট অবশ্য একটু পরেই কমে গেল। অবশেষে একেবারেই থেমে গেল। যাত্রীরা তখন আনন্দে নাচগান শুরু করে দিল। দেবতাদের ধন্যবাদ বা পূজা দেবার কথা তাদের একবারও মনে এল না। জাহাজের চালক দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাদের এইসব কাণ্ড দেখছিলেন। শেষে আর না থাকতে পেরে তিনি বলে উঠলেন, ভাইসব, মুশকিল আসানের পর প্রতিশ্রুতির কথা ভুলে আমরা আনন্দে মেতে উঠেছি বটে, তবে এ কথাও মনে রাখবেন, আগের চেয়েও বেশি দুর্যোগের মধ্যে আমরা আবার পড়তে পারি।
উপদেশ : বিপদ অবসানেও ঈশ্বরের কথা স্মরণ করতে হয়।
অন্যায়ের প্রশ্রয়
একটি ছেলে ছিল। ছোট বেলাতেই সে তার মাকে হারিয়েছিল। ফলে সে তার মাসীর কাছেই বড় হচ্ছিল। তার মা নেই বলে কেউ তাকে কখনও বকাঝকা করতো না। মাসী তাকে খুবই আদর করত। একদিন ছেলেটি স্কুলের এক সহপাঠীর পেন্সিল চুরি করে এনে তার মাসীকে দেখাল, মাসী তাকে তিরস্কার না করে তার প্রশংসাই করল। ছেলেটি আর একবার তার কোনো বন্ধুর বাড়ি থেকে একটা ভাল জামা চুরি করে এনে তার মাসীকে দিল, মাসী তাকে আরও প্রশংসা করল। ছেলেটি এরপর ক্রমশ বড় হয়ে যৌবনে উপনীত হলে আরও বড় রকমের সব চুরি করতে শুরু করল। এমনি করতে করতে একদিন সে ধরা পড়ে গেল। তার চুরির বিচার হল আদালতে, তাতে তার প্রাণদণ্ডের আদেশ হল। বধ্য ভূমিতে নিয়ে যাওয়ার আগে তাকে জিজ্ঞাসা করা হল, কোনো সাধ আছে তোমার? কোনো ইচ্ছে থাকলে বলতে পার। এদিকে মাসী তার পুত্রবৎ ছেলেটির প্রাণদণ্ডের আদেশ শুনে বুক চাপড়ে কাঁদছিল ছেলেটি বধ্যভূমিতে যাবার আগে বলল – আমি আমার মাসীর কানে কানে কয়েকটি কথা বলতে চাই। এই অনুমতি মিলল । ফলে সে মাসীর কানের কাছে মুখ নিয়ে তার কানের লতি কামড়ে ছিঁড়ে দিল। তারপর বলল, মাসী, আজ তুমিই আমার প্রাণদণ্ডের কারণ। প্রথম থেকে কু-অভ্যাস ত্যাগ করতে বললে আজ আর আমাকে এইভাবে মরতে হোতো না ।
উপদেশ : ন্যায়-অন্যায় সম্পর্কে শিশুদের ছোটবেলা থেকেই শিক্ষা দিতে হয়।
মিথ্যা
একদা এক গ্রামে দুটি ছেলে ছিল। ছেলে দু’টি একদিন মাংসের দোকানে মাংস কিনতে গেল। কসাই যেইনা তাদের দিকে পিছন ফিরেছে, অমনি ছেলে দু’টির একজন কিছুটা মাংস তুলে নিয়ে অপর ছেলেটির পকেটে পুরে দিল। কসাই মুখ ফিরে তার রাখা মাংস দেখতে না পেয়ে ছেলে দুটিকে ধরল—তোরা নিশ্চয়ই আমার মাংস চুরি করেছিস? – যে ছেলেটি মাংস তুলে নিয়েছিল সে শপথ করে বলল – আমার কাছে কোনো মাংস নেই। আর যা পকেটে মাংস ছিল, সেও শপথ করে বলল—আমি তোমার মাংস চুরি করিনি। কসাই তখন তাদের চালাকি ধরতে না পেরে বলল – বুঝেছি বাবা, বুঝেছি, এ চালাকি বা শপথ করে তোমরা আমাকে ঠকাতে পারলে বটে, কিন্তু দেবতাদের চোখে ধুলো দিতে পারবে না। উপদেশ : শপথ করে মিথ্যাকে সত্যে পরিণত করা যায় না।
Download PDF : শিক্ষনীয় গল্প
আরও দেখুনঃ