বৃক্ষরোপণ রচনা স্কুলের পরীক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা ।তাই সহজ সরল ভাষায় বৃক্ষরোপণ রচনাটি বর্ণনা করা হল।
ভূমিকা
বৃক্ষ আমাদের পরমবন্ধু । বৃক্ষ শুধু মাটির মর্ম প্রাকৃতিক শোভাই বাড়ায় না, রোধ করে বন্যা প্রতিরোধ করে ঝড় তুফানকে বাঁধ দিয়ে জীবন ও সম্পদ রক্ষা করে আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণেও বৃক্ষের ভূমিকা অপরিসীম বৃক্ষ ছাড়া পৃথিবী মরুভূমিতে পরিনত হতো। বৃক্ষ অক্সিজেন সরবরাহ করে আমাদের বাঁচিয়ে রাখে। প্রকৃতি সবসময়ই ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পরিবেশকে রক্ষা করে। এ ক্ষেত্রে তাকে সহায়তা করে বৃক্ষরাজি। কিন্ত সভ্যতাকে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে এবং নিজেকে সভ্য করে তুলতে মানুষ অবাধে আঘাত হেনেছে প্রকৃতির রক্ষাকবচ এই বৃক্ষের ওপরে। ফলে প্রকৃতির প্রতিক্রিয়া দেখতেও আমরা বাধ্য হচ্ছি। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় যেখানে কোনো দেশের মোট আয়তনের অন্তত ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা প্রয়োজন সেখানে বেশিরভাগ দেশই তা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।
বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা
বিশ্বের বনভূমি উজাড় হতে হতে অর্ধেকে এসে দাঁড়িয়েছে এর ফলে বিশ্ব পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে। অথচ মানুষের বসবাসের উপযোগী ভারসাম্যপূর্ণ পৃথিবীর জন্যে গাছপালার কোনো বিকল্প নেই। অক্সিজেন দিয়ে গাছপালা কেবল আমাদের জীবন রক্ষা করে না, প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষ পালন করে অনিবার্য ভূমিকা। প্রস্বেদন প্রক্রিয়া ও বাষ্পীভবনের মাধ্যমে বৃক্ষ আবহাওয়া মণ্ডলকে বিশুদ্ধ রাখে, জলীয় বাষ্প তৈরি করে বাতাসের আর্দ্রতা বাড়িয়ে বায়ুমণ্ডলকে শীতল রাখে। বৃক্ষ বৃষ্টি ঝরিয়ে মাটিতে জলের পরিমান বৃদ্ধি করে। বাড়িয়ে দেয় মাটির জলধারণ ক্ষমতা। তাই বৃক্ষকে গণ্য করা হয় বায়ুমণ্ডলের বিশুদ্ধকরণ ও শীতলীভবনের অন্যতম অনুঘটক হিসাবে। এছাড়াও গাছপালা মাটির উর্বরতা বাড়ায়, মাটির ক্ষয় রোধ করে।
বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি
জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী বিশ্বের উন্নত ও সুসভ্য দেশগুলো উন্নয়নশীল দেশের চেয়ে বেশিমাত্রায় বনভূমি ধ্বংস করছে। কিন্তু এর ক্ষতিকর প্রভাব বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পড়ছে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর ওপরে। উন্নত দেশগুলোর অধিক হারে বৃক্ষনিধনের ফলে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাচ্ছে। ফলে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর ডুবে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কার্বন-ডাই-অক্সাইড এর পরিমান বৃদ্ধি পাওয়ায় বায়ুমণ্ডলের ওজনস্তরে ফাটল ধরেছে। যার ফলে গ্রীন হাউস এফেক্টের মতো মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। বিরুপ প্রতিক্রিয়া পড়েছে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর আবহাওয়াতেও। দিনের বেলা দুঃসহ গরম আর রাতে শীত অনুভূত পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, এ লক্ষণ মরুকরণ প্রক্রিয়ার আশঙ্কাজনক পূর্বাভাস।
বৃক্ষরোপণের প্রয়োজনীয়তা
ভূ-বিজ্ঞানীদের মতে অনাবৃষ্টির কারণে দেশের ভূ-গর্ভস্থ জলের স্তর দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। এই বিপর্যয়ও পর্যাপ্ত বনভূমি না থাকারই ফল, দেশে ক্রমবর্ধমান নগরায়নের ফলে বহু এলাকা কৃষিহীন হয়ে পড়েছে। দেশের প্রধান প্রধান শহর বলতে গেলে পরিনত হয়েছে বৃক্ষহীন ইটের স্তূপে। নাগরিক জীবনে যন্ত্রযান ও কলকারখানার উৎসারিত কালো ধোঁয়া, বিষাক্ত গ্যাস ও ধুলোবালির নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে নগরবাসীর স্বাস্থ্যের উপর। । তাই নগরের সৌন্দর্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষাকল্পে বৃক্ষরোপণ করা প্রয়োজন, স্বেচ্ছাপ্রণোদিতভাবে বাড়ির আনাচে-কানাচে, সড়ক, মহাসড়ক এর দুপাশে অন্যবাদী ভূমিতে, নদীর পাড়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে গাছ লাগিয়ে প্রকৃতি ও পরিবেশকে বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে আমাদের বদ্ধপরিকর হওয়া প্রয়োজন।
বনসংরক্ষণ
বনসংরক্ষণ ব্যতীত বৃক্ষরোপণ একেবারেই অর্থহীন, গাছ লাগানোর সাথে সাথে বনভূমিতে যেসব গাছ রয়েছে তাদের বাঁচিয়ে রাখাটাও মানুষেরই দায়িত্বের অঙ্গ পৃথিবীকে দূষণমুক্ত সবুজ ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে গাছের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে, শুধু গাছ লাগানোই যথেষ্ট নয়, এর জন্য প্রথমে অনিয়ন্ত্রিত অরণ্য ধ্বংস বন্ধ করা প্রয়োজন। এছাড়াও নতুন যে সমস্ত বৃক্ষচারা রোপন করা হচ্ছে সেইগুলি যাতে নিরাপদে . বেড়ে উঠতে পারে সেদিকেও সচেতন নজর দেওয়া দরকার। তদুপরি কোনো বিশেষ প্রয়োজনে একটি গাছ উচ্ছেদ করলে তার বদলে অন্তত দশটি চারা গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া দরকার। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র সরকারী বা বেসরকারী সংগঠিত উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। স্বত:স্ফূর্ত সার্বিক উদ্যোগ সচেতনতাই বন সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সাফল্য এনে দেবে।
উপসংহার
বৃক্ষরোপণ ও সংরক্ষণের এই মহাযজ্ঞে যদি আমরা সফল মন হই, তাহলে হয়তো আবার কোন দিন স্নিগ্ধ বাতাসে কোন এক ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শ্বাস নিতে পারবে। হয়তো আমরা সত্যিই এ পৃথিবীর তা জীবকূলকে এক অমোঘ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে পারবো। আবারো এ পৃথিবীর প্রাণী ও উদ্ভিদকূল প্রকৃতির নিয়মে পারস্পরিক আদান প্রদানের মাধ্যমে পরম শান্তিতে নিজেদের জীবন অতিবাহিত করতে পারবে। তাই আজ পরিবেশের সঙ্কটকালে দূর ভবিষ্যৎের সোনালী স্বপ্নকে চোখে আর তা রেখে সমগ্র মানবজাতির অঙ্গীকার হোক পরিবেশ রক্ষা।
FAQ :-
1. বৃক্ষরোপণের গুরুত্ব কি?
গাছ কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যস শোষণ করে আমাদের অক্সিজেন দেয় যার দ্বারা আমরা বেঁচে থাকি,এছাড়া মাটির ক্ষয় রোধে ও জলবায়ুর ভারসাম্য ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
2. পৃথিবীতে কত প্রজাতির গাছ আছে?
পৃথিবীতে প্রায় ৩৫০,০০০ প্রজাতির গাছ আছে
3. গাছ লাগাব কেন?
গাছ ছাড়া আমাদের জীবন অচল,গাছ সালোকসংশ্লেষ এর মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন করে এবং আমাদের অক্সিজেন দেয় যার দ্বারা আমরা বেঁচে থাকি।
আরও পড়ুনঃ