ভূমিকা
ক্রীড়াজগতে বর্তমান বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেট। বিশ্বায়নের প্রভাবে বর্তমানে বিশ্বের দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়েছে জনপ্রিয় এ খেলাটি। ভারতবর্ষে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নাবিকরা ১৭২১ সালে ক্রিকেটের সূচনা করেন বলে জানা যায়। প্রতি চার বছর অন্তর বিশ্বকাপ ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হয়। ২০২৩ বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতাটি ১৩তম আসর।
ক্রিকেটের উৎপত্তি ও বিকাশ
ক্রিকেটের জন্ম ইংল্যান্ডে। তাই ইংল্যান্ডকে বলা হয় ক্রিকেটের জনক। অভিজাতদের অবসর কাটানোর মাধ্যম হিসেবে ক্রিকেট খেলার উদ্ভাবন হয়। এটি ছিল রাজবংশীয় অর্থাৎ অভিজাতদের খেলা। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে ইংল্যান্ডের রাজা এডওয়ার্ডের আমলে একটি বইতে ক্রিকেট খেলার উল্লেখ রয়েছে। তবে এ খেলা জনপ্রিয়তা লাভ করে অষ্টাদশ শতাব্দী থেকে। ১৭৪৫ সালে ইংল্যান্ডে মহিলা ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিল এমন তথ্যও মিলেছে। তবে এর আগে ১৭৪৪ সালে ক্রিকেট খেলার কিছু নিয়মকানুন চালু হয়।
আইসিসির প্রতিষ্ঠা
আইসিসি বা ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কনফারেন্স গঠিত হয় ১৯৫৬ সালে। মূলত আইসিসি প্রতিষ্ঠা পায় ১৯০৯ সালে। তখন এটি ইমপেরিয়াল ক্রিকেট কনফারেন্স নামে পরিচিত ছিল। ‘ইন্টারন্যাশনাল হিসেবে পরিবর্তনের ফলে ব্রিটিশ কমনওয়েলথভুক্ত দেশ ছাড়াও অন্যান্য দেশ এর সদস্য হবার সুযোগ পায়।
বিশ্বকাপের অতীত ইতিহাস
১৯৮৩ সালে ২৫ জুন লর্ডসের ফাইনালে প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে অবিশ্বাস্যভাবে ভারত প্রথমবার বিশ্বকাপ ফাইনালে জিতেছিল। সেই দিন ভারতবাসী আনন্দে আলোর রোশনাই ছড়িয়ে নূতন করে দেওয়ালি উৎসবে মেতে উঠেছিল। ২০১১-তে শ্রীলঙ্কাকে পরাজিত করে ভারত মহেন্দ্র সিংহ ধোনির নেতৃত্বে ক্রিকেটে বিশ্বকাপ জয় করে শ্রেষ্ঠ দল হিসাবে নিজেদের বিশ্ব ক্রিকেটে প্রতিষ্ঠিত করে। ২০১১-তে ভারতের দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ জয় ছিল।
অংশগ্রহণ কারী দল
২০২৩ আসন্ন বিশ্বকাপে মোট ১০ টি দল অংশ নিয়েছিল। ভারত আয়োজক দেশ হিসাবে, আফগানিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, বাংলাদেশ, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান এবং দক্ষিণ আফ্রিকা।
ভারতের বিশ্বকাপ দল গঠন
রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), শুভমান গিল, বিরাট কোহলি, শ্রেয়াস আইয়ার, ঈশান কিষাণ, কেএল রাহুল, হার্দিক পান্ডিয়া (সহ-অধিনায়ক), সূর্যকুমার যাদব, রবীন্দ্র জাদেজা, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, শার্দুল ঠাকুর, জাসপ্রিত বুমরাহ, মো.শামী, মো.সিরাজ, কুলদীপ যাদব।
স্থান এবং সময়কাল
বিশ্বকাপের সমস্ত ৪৮ টি ম্যাচ ১০ টি ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ভারত তাঁদের ম্যাচগুলি খেলেছিল চেন্নাই, দিল্লি, আহমেদাবাদ, পুনে, ধর্মশালা, লখনউ, মুম্বাই, কলকাতা, বেঙ্গালুরু এবং আহমেদাবাদে ৷ ৫ই অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে যা ১৯শে নভেম্বর, ২০২৩ পর্যন্ত চলেছিল।
ফলাফল
রবিবার আমদাবাদে বিশ্বকাপ ২০২৩-এর ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া টস জিতে ভারতকে ব্যাট করতে পাঠায়। সেইমতো খেলার শুরুতে ব্যাট করতে নামে ভারত। তারা নির্ধারিত ৫০ ওভারে ২৪০ রানে অল-আউট হয়ে যায়। পালটা ব্যাট করতে নেমে অস্ট্রেলিয়া ৪৩ ওভারে ৪ উইকেটের বিনিময়ে ২৪১ রান তুলে ম্যাচ জিতে যায়। ৪২ বল বাকি থাকতে উইকেটে ম্যাচ জিতে ষষ্ঠবার ওয়ান ডে বিশ্বকাপের খেতাব ঘরে তোলে অস্ট্রেলিয়া ৷
ভারতবাসীর আবেগ
দিনটা ছিল রবিবার। সকাল থেকেই বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ব্যস্ত ছিল খেলাটা কে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য । কোন কোন ভিআইপি খেলা দেখতে আসবেন, ভারতীয় বিমান বাহিনী কেমন ভূমিকা হবে ইত্যাদি নিয়ে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজে স্বয়ং উপস্থিত থেকে এ খেলা দেখেছিলেন। এছাড়াও ছিলেন অতীতে বিশ্বকাপ জয়ী ২ ক্যাপ্টেন কপিল দেব এবং মহেন্দ্র সিং ধোনি। অফিস আদালত বন্ধ থাকায় মানুষ ঐদিন খেলা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল ।কেউ টিভির পর্দায় । কেউ মোবাইলে এই খেলা উপভোগ করেছিল। খেলার মাঠের বাইরে বড়ো বড়ো পর্দায় অনেকেই খেলা দেখেছিল। নিজের দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ জয় কে খুব আনন্দের সঙ্গে উপভোগ করেছিল। ট্রেনে বাসে চায়ের দোকানে সর্বোত্তরই খেলার গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছিল। খেলায় ভারতের পরাজয় ভারতবাসীর মনে শোকের ছায়া নেমে আসে।
উপসংহার
প্রত্যেক খেলায় যেমন জয় আছে তেমনি পরাজয় আছে। পরাজয়ের ব্যর্থতা শিক্ষা জয়ের পথকে সুগম করে ।এত ভালো খেলা করে ভারত যে পরাজয় গ্রহণ করেছে। একদিন হয়তো ভারত ক্রিকেট বিশ্বকাপে শ্রেষ্ঠ আসন গ্রহণ করবে। একটা দেশ একটা দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে উঠবে ক্রিকেট বিশ্বকাপের হাত ধরে।
Download : বিশ্বকাপ ক্রিকেট রচনা 2023 PDF
আরও দেখুনঃ