জাতীয় সংহতি রচনা

নমস্কার বন্ধুরা, আজ আমরা জাতীয় সংহতি রচনা নিয়ে একটি পোস্ট উপস্থাপন করছি আশা রাখি রচনাটি সবার ভালো লাগবে।

ভূমিকা

জাতীয় সংহতি বলতে আমরা বুঝি কোন দেশের জনগণের মধ্যে আন্তরিক ঐক্য বা ঐক্যচেতনা বা ঐক্যানুভূতি। কোন জাতির এগিয়ে চলার মূল মন্ত্র হলো জাতীয় সংহতি। আমাদের দেশ ভারতবর্ষে নানা ভাষা, নানা জাতি, নানা ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস, তবুও দিনের শেষে আমাদের একটাই পরিচয় আমরা ভারতবাসী, আমরা ভারতমাতার সন্তান।আমাদের হৃদয় এক সুরে গায় জাতীয় সংহতির গান।

 রবীন্দ্রনাথের গান “এক সূত্রে বাঁধিয়াছি সহস্রটি মন এক কার্যে সঁপিয়াছি সহস্ৰ জীবন – বন্দেমাতরম”।

বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য

আমাদের দেশ ভারতবর্ষ বহু জাতির মিলন তীর্থ ভারতবর্ষের ভিন্ন ভিন্ন রাজ্যে ভিন্ন ভিন্ন ভাষা,তাদের পোশাক পরিচ্ছদ ভিন্ন ভিন্ন রকমের, তাদের খাবার দাওয়ার ও আলাদা আলাদা ধরনের, তাদের সংস্কৃতির মধ্যে আছে বৈচিত্র্য, তাদের ধর্মীয় চেতনাও আলাদা আলাদা।আঞ্চলিক বৈচিত্র্য ছিল আছে ও ভবিষ্যতেও থাকবে। এই বৈচিত্র্যের মাঝেই আমরা দেখি ভারতবর্ষের বুকে ঐক্য চেতনা যা আমাদের দেশের একতা ও সংহতিকে সমৃদ্ধ করেছে। ভারত- আত্মাকে করে তুলেছে “এক দেশ এক প্রাণ”। ভারত আত্মার মর্মবাণী হলো “বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য” (Unity in Diversity) ।

বিচ্ছিন্নতাবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা

স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় থেকে যাতে আন্দোলন তীব্রতর আকার ধারণ করতে না পারে ব্রিটিশ রাজশক্তি” Divide and Rule Policy”র মাধ্যমে হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়িক দাঙ্গা, বিভিন্ন ভাষাগোষ্টীর মধ্যে দ্বন্দ্ব লাগানোর চেষ্টা করে।স্বাধীনতার পরেও ধর্মীয় গোঁড়ামী ও নানা সংকীর্ণতা আমাদের দেশের জাতীয় সংহতিকে নানাভাবে বিপন্ন করেছে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন এলাকাতে সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনও হয়েছে যা একেবারে অনভিপ্রেত এবং ভারতীয় সংস্কৃতির সাথে যায় না।

জাতীয় সংহতিতে বাধা

জাতীয় সংহতিতে যে সমস্ত কারণ বাধা হিসেবে কাজ করে সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ধর্মীয় গোঁড়ামি ও সাম্প্রদায়িকতা, বর্ণবৈষম্য, জাতিভেদ প্রথা,অস্পৃশ্যতা, কোন ভাষার প্রতি অবহেলা, সংকীর্ণ প্রাদেশিকতা রাজনৈতিক প্রতি হিংসা, অর্থনৈতিক অসাম্য,জনসংখ্যা বৃদ্ধি, নিরক্ষরতা,অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার, বেকারত্ব, মানুষের ক্ষমতা স্পৃহা ও বিদেশী শক্তির মদত।

সংহতি রক্ষার উপায়

যে সমস্ত অশুভ শক্তি জাতীয় সংহতিকে বিপন্ন করে তাদের বিনাশ ঘটাতে হবে। নতুবা জাতীয় সংহতি রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। সুতরাং জাতীয় সংহতি রক্ষার জন্য দরকার শুভ চেতনার জাগরণ। কোন সমস্যা দেখা দিলে সমস্যাটির গভীরে প্রবেশ করে মানবিকতার দৃষ্টিভঙ্গিতে সমস্যাটির সমাধান করতে হবে। মানুষের ন্যূনতম চাহিদা পূরণে যোথপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সামাজিক ন্যায়বিচার ও আর্থিক উন্নয়নে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আঞ্চলিক বৈষম্য থাকলে তা সুবিবেচনার মাধ্যমে দূর করতে হবে। মহাপুরুষদের প্রেমের বাণী শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার করতে হবে। মানুষকে সৌহার্দ ও প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ করতে হবে। ভারতবর্ষের মাটি শুধু মাটি নয়, ভারত জননী, দেশ মাতৃকা। এই দেশের সমস্ত অঞ্চলের মানুষেরাই যে আমাদের ভাই- বোন আত্মীয়-স্বজন এইভাব মানুষের মনে জাগাতে হবে। মনে রাখতে হবে স্বামী বিবেকানন্দের সেই কথা “আমি ভারতবাসী, ভারতবাসী আমার ভাই”।

উপসংহার

বহু শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীন হয়েছি। আমাদের স্বাধীনতা, আমাদের অখন্ডতা রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের সকলেরই এবং আমরা তা পারবো। মানুষের মনের অন্ধ বিশ্বাস ও কুসংস্কারকে শিক্ষার প্রসারের মাধ্যমে দূর করতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমেই ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। দেশের কোটি কোটি মানুষকে এক জাতি এক প্রাণ একতার মন্ত্রে দীক্ষিত করতে হবে। ভারতীয় সংস্কৃতির মূলমন্ত্র হল ঐক্যচেতনা। ঐক্যচেতনায় হয়ে উঠবে ভারতবাসীদের আদর্শ। কবি ও কৃষি বিজ্ঞানী ডক্টর গৌতম কুমার মল্লিক একটি সুন্দর স্লোগান লিখেছেন”, Our Love, Our Integrity”। বাস্তবিক-ই তাই। পারস্পারিক ভালোবাসাই সংহতির ভিত্তি যা বৃহত্তর অর্থে জাতীয় সংহতি।আমাদের সবার হৃদয়ে আছেন রবীন্দ্রনাথ, আমাদের চেতনাতে আছেন নজরুল। আমাদের বিশ্বাস যতই বাধা বিঘ্ন আসুক না কেন আসুক না কেন আমরা আমাদের জাতীয় সংহতি রক্ষা করতে পারবো।

আরও দেখুনঃ

প্রজাতন্ত্র দিবস রচনা

জাতীয় পতাকা রচনা

Leave a Comment