সরস্বতী পূজা রচনা For Class 3-10

সরস্বতী পূজা রচনা প্রতিটি ক্লাসের পরীক্ষায় ক্ষেত্রে গুরুত্ব পূর্ণ । তাই সহজ সরল ভাষায় সরস্বতী পূজা রচনা বর্ণনা করা হল।

ভূমিকা

বাঙালির সাধারণ জীবন হলো উৎসবে ভরপুর। সে কারণেই বলা হয় বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। এসকল পার্বণ-এর মধ্যে যেমন রয়েছে নানা প্রকার লোকাচার, মেলা, তেমনি রয়েছে বিভিন্ন রকমের পূজা। হিন্দুরা একদিকে যেমন ধনসম্পত্তির দেবীরূপে লক্ষীকে আরাধনা করে থাকে, তেমনি বিদ্যা বা জ্ঞানের দেবীরূপে দেবী সরস্বতীর আরাধনা করে থাকে। দেবী সরস্বতী বিদ্যার ও জ্ঞানের দেবী, তাই মূলত শিক্ষার্থীরা এই উৎসব আয়োজ থাকে।

সরস্বতী পূজার ইতিহাস

শাস্ত্রীয় নির্দেশ অনুসারে সরস্বতী পরবর্তী বৈদিক যুগের একজন দেবী। প্রাচীন যুগে তান্ত্রিকরা দেবী সরস্বতীর মতন দেখতে দেবী বাগেশ্বরীর আরাধনা করতেন বলে জানা যায়। ঐতিহাসিকরা মনে করেন যে দেবী সরস্বতীর বর্তমান রূপটি তুলনামূলকভাবে নতুন। তবে পুরাকালে তার রূপটি বর্তমানের তুলনায় ভিন্ন হলেও খুব একটা আলাদা ছিল না । বর্তমানে এই পূজা বাঙ্গালীদের মধ্যে গৃহস্থের অন্দরমহল কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অঙ্গনে সীমাবদ্ধ থাকলেও কয়েক শতাব্দী আগে পর্যন্তও বাংলার বুকে বিভিন্ন জায়গায় ধুমধাম করে মহাসমারোহে সরস্বতী পূজা হত।

সরস্বতী পূজার সময় প্রকৃতি

সরস্বতী পূজা সংক্রান্ত আলোচনার ক্ষেত্রে এই পূজার সময়কার প্রকৃতির কথা উল্লেখ না করলেই নয়। বছরের এই সময়টিতে প্রকৃতির রূপ থাকে অত্যন্ত মনোরম। বসন্ত পঞ্চমী শীতকালের বিদায় ধ্বনি ঘোষণা করে ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ করে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরস্বতী পূজা

 সরস্বতী পূজা সম্ভবত একমাত্র ধর্মীয় উৎসব যা প্ৰায় প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অতি ধুমধাম সহকারে আয়োজন করা হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আয়োজিত হওয়া এই পূজাকে কেন্দ্র করে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিশেষ উদ্দীপনা সঞ্চারিত হয়। সরস্বতী পূজার কয়েকদিন আগে থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুল-কলেজে পূজার আয়োজনে অংশগ্রহণ করে। কেউ ব্যস্ত থাকে আলপনা দিতে, কেউ ব্যস্ত থাকে পূজার ঘর সাজাতে, কারোর ওপর আবার দায়িত্ব পড়ে প্রতিমা আনার।

সরস্বতী পূজার রীতিনীতি

এই বিশাল দেশে স্থানভেদে সরস্বতী পূজার রীতিগত ক্ষেত্রে সামান্য কিছু পার্থক্য থাকলেও মোটামুটি সব জায়গার রীতিনীতি প্রায় একরকম। শাস্ত্ৰীয় বিধান অনুসারে বসন্ত পঞ্চমীর দিন সকাল বেলা এই পূজা সম্পন্ন করা যায়। অন্যান্য পূজার মতোই নিয়ম অনুসারে এই পূজা সম্পন্ন হয়ে থাকে। তবে এই পূজায় বিশেষ প্রয়োজনীয় উপাচার হিসেবে অভ্র- আবির, আমের মুকুল, দোয়াত কলম, এবং যবের শিষ প্রয়োজন হয়। এছাড়া সরস্বতী পূজার সবচেয়ে জনপ্রিয় অঙ্গ পুষ্পাঞ্জলীর সময় উচ্চারিত মন্ত্রগুলি সকল বাঙ্গালীর কণ্ঠস্থ।

স্থানভেদে সরস্বতী পূজার রূপ

 ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে সরস্বতী পূজার রূপ বিভিন্ন রকম। বাংলা এবং সংলগ্ন কিছু রাজ্যে যেমন সরস্বতী পূজা মূলত গৃহ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে, উত্তর ভারতের ক্ষেত্রে এমনটা নয়। ভারতবর্ষের পশ্চিম প্রান্ত গুজরাট রাজ্যে কচ্ছ অঞ্চলে বসন্ত পঞ্চমীর এই দিনটি ভালোবাসা এবং মনের আবেগ উদযাপনের সঙ্গে জড়িত।

উপসংহার

সরস্বতী পূজা হলো বাঙালির তথা আপামর ভারতবাসীর প্রাণের উৎসব। এই পূজাকে কেন্দ্ৰ করে সকল বাঙালির মনে সর্বপ্রকার ভেদাভেদ ভুলে যে পূর্ণতার বিকাশ ঘটে তা বাঙালিকে সম্ভবত সারা বছরজুড়ে জ্ঞান এবং সংস্কৃতিচর্চার রসদ জুগিয়ে দেয়। যুগ যুগ ধরে এই পূজা বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ রূপে বাঙালির পার্বণের তালিকা কে বিশেষভাবে অলংকৃত করে এসেছে এবং ভবিষ্যতেও এই ধারা একইভাবে অক্ষুণ্ণ থাকবে।

FAQ :-

1.সরস্বতী পূজায় কি কি লাগে?

সরস্বতী দেবীর মূর্তি, সাদা কাপড়, ফুল, আম্রপত্র, বেলপাতা,কাঁচা হলুদ, সিঁদুর, চাল, ধান, দূর্বা, ফল পাঁচ ধরনের(কলা এবং নারকেল আবশ্যক), কলস, সুপুরি, পানপাতা, ধুপকাঠি, প্রদীপ, দুধ।

2.সরস্বতী দেবীর স্বামীর নাম কি?

পুরাণের কোথাও বিষ্ণুর কথা আবার কোথাও ব্রহ্মাকে সরস্বতীর স্বামী হিসেবে বলা হয়েছে।

3.সরস্বতী দেবীর অপর নাম কি?

সরস্বতী দেবীর অপর নাম বীণাপাণি

আরও পড়ুনঃ

দূর্গাপূজা-বাংলা রচনা

শীতকাল রচনা

স্বামী বিবেকানন্দের রচনা

Leave a Comment