রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচনা স্কুলের পরীক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা। তাই সুন্দর ও সরল ভাষায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচনাটি বর্ণনা করা হল।
ভূমিকা
কোন জাতির সংস্কৃতি ও সভ্যতার শ্রেষ্ঠত্বের মানদন্ড হচ্ছে তার কবি ও সাহিত্যিক। তাঁরাই মানব সভ্যতার আলোকস্তম্ভ তাঁদের সৃষ্টি মানুষকে জ্ঞান দেয়, আনন্দ দেয়। বাঙালি কবি, লেখক, সাহিত্যিক বললেই যাঁর নামটি প্রথম উঠে আসে তিনি হলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বিশ্বে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এমনই এক প্রতিভা যিনি সর্বযুগে সর্বকালে চির প্রাসঙ্গিক, চির নবীন ও চিরন্তন রুপে শাশ্বত।
জন্ম ও পরিবার
১৮৬১ সালের ৭ মে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম হয়। তাঁর পিতা ছিলেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মা শ্রীমতি সারদা দেবী। তিনি ছিলেন তাঁর পিতামাতার চতুর্দশতম সন্তান।
আবির্ভাব পটভূমি
উনিশ শতকের প্রথম ও দ্বিতীয় অর্ধে বাংলা সাহিত্যে-সমাজে এলো এক প্রাণ-সমৃদ্ধ নতুন দিনের জোয়ার। এলেন নবযুগের পথিকের দল ৷ সেই বরণীয় মনীষীদের কর্মণায় রচিত হলো ভাবী প্রতিভার উর্বর ভূমি। জোড়াসাঁকো ঠাকুরপরিবার তখন শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির অন্যতম পীঠস্থান, আধুনিকতার প্রাণকেন্দ্র, জাতীয়তাবোধের উন্মেষ-ক্ষেত্র। এই পরিবারেই ১৩৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ শে বৈশাখ (ইং ১৮৬১-র ৭ই মে), জন্ম নিলেন এক বিস্ময়কর প্রতিভা। সেই প্রতিভার নাম রবীন্দ্রনাথ।
শিক্ষা
ঠাকুরপরিবারের উন্নত পরিবেশেই শুরু হলো তাঁর বিদ্যাচর্চা। ছ-বছর বয়সে ভর্তি হলেন ওরিয়েন্টাল সেমিনারিতে। কিছুদিন পরেই বিদ্যালয়ের পঠন-পাঠন যান্ত্রিকতায়, পরিবেশের নিষ্প্রাণতায় শিশু-মন ক্ষুদ্ধ হলো। বছরখানেক পরেই ওরিয়েন্টাল সেমিনারি ছেড়ে দিলেন। ভর্তি হলেন নর্মাল স্কুলে। সেখান থেকে গেলেন বেঙ্গল একাডেমিতে। এ সময় তাঁর উপনয়ন হয়। পিতার সঙ্গে গেলেন বোলপুর। সেখান থেকে ডালহোসি পাহাড়। প্রকৃতিকে দুচোখ ভরে দেখলেন। হিমালয় থেকে ফিরে আবার সেই বেঙ্গল একাডেমি। কিন্তু বিদ্যালয়ের গতানুগতিকতা তাঁকে বাঁধতে পারল না। বেঙ্গল একাডেমি ছেড়ে গেলেন সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল। সেখানেও ঠাঁই হলো না। এবার প্রবাসের হাতছানি। ১৮৭৮-এর সেপ্টেম্বরে পাড়ি দিলেন বিলেতে। সেখানে পাবলিক স্কুলে ভর্তি হলেন। কিছুদিন পরে সেখান থেকে গেলেন লণ্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে। দেড় বছর পরে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন। ব্যারিস্টারি পড়ার উদ্দেশ্যে আবার একবার বিলেতের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিলেন। কিন্তু মাদ্রাজ থেকেই ফিরে এলেন।
কাব্যচর্চা
ঠাকুরপরিবারের সৃষ্টিশীল পরিমণ্ডলেই রবীন্দ্রনাথের কাব্যচর্চার শুরু। বড়দের কাছ থেকে পেতেন উৎসাহ। নতুন বউঠান কাদম্বরী দেবী তাঁকে দিতেন প্রেরণা। ‘হিন্দুমেলা’, ‘বিদ্বজ্জন সভায় তিনি কবিতা পাঠ করছেন। তের বছর বয়সে ‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হলো তাঁর প্রথম কবিতা। কবি-প্রাণে লাগে সৃষ্টির পুবালী হাওয়া। তিনি লিখলেন ‘বনফুল’। প্রকাশিত হলো ‘কবি-কাহিনী’। তের থেকে আঠার বছর বয়স পর্যন্ত তাঁর রচিত কবিতাসম্ভার নিয়ে বেরোলো ‘শৈশব সঙ্গীত’। ষোল সতের বছর বয়সে লিখলেন ‘ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী’।
সাহিত্য–সাধনা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনাগুলি হল কবিতা, সঙ্গীত, সাহিত্য এছারাও তিনি রং তুলি দিয়ে আঁকতে ভালোবাসতেন। তাঁর উল্লেযোগ্য কবিতার সংকলন হল “গীতাঞ্জলি”। তার রচিত উল্লেখযোগ্য কাব্য – মানসী, সোনার তরী, চৈতালী, বলাকা, পুনশ্চ প্রভৃতি; উপন্যাস-চোখের বালি, ঘরে-বাইরে, যোগাযোগ, চতুরঙ্গ প্রভৃতি; নাটক– বিসর্জন, রক্তকরবী প্রভৃতি; ছোটগল্পগ্রন্থ- গল্পগুচ্ছ, এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সাহিত্যকর্ম লিখে গেছেন। তিনি শুধু একজন কবিই ছিলেন না, সঙ্গীতের একজন প্রখ্যাত রচয়িতাও ছিলেন। তিনি “রবীন্দ্র সঙ্গীত” (ঠাকুরের গান) নামে পরিচিত গানের একটি বিশাল সংগ্রহ তৈরি করেছেন, যার সংখ্যা এখন 2,000 টিরও বেশি। তিনি ভারতের জাতীয় সঙ্গীত “জন গন মন” রচনা করেন।তিনি হলেন বিশ্ববন্দিত কবি। গানের জগতেও আনলেন নতুন ধারা। কথা ও সুরের সমন্বয়ে সঙ্গীতেও রবীন্দ্রনাথ এক বিরল ব্যক্তিত্ব।
কর্ম কৃতিত্ব
১৯১৩খ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর গীতাঞ্জলি কাব্যের জন্য নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ইংরেজ সরকার তাঁকে নাইট উপাধি দিয়ে সম্মানিত করেন। ১৯১৯ খ্রী জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ড এর প্রতিবাদে তিনি নাইট উপাধি ত্যাগ করেন। কেবল কবিতা ও সাহিত্যচর্চা নিয়ে রবীন্দ্রনাথ নিজেকে আবদ্ধ রাখেননি। তিনি ছিলেন মানবদরদী ও শিক্ষানুরাগী এছাড়াও তিনি চিত্রশিল্পী, গায়কও ছিলেন। তাঁর অন্যতম বড়ো কাজ বোলপুরে শান্তিনিকেতন বিদ্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা এবং শ্রী নিকেতন প্রতিষ্ঠা। বিভিন্ন প্রসঙ্গে তিনি কয়েক হাজার গান রচনা করেছেন এবং সুরও দিয়েছেন। তাঁর রচিত গানগুলি রবীন্দ্র সঙ্গীত নামে পরিচিত। ভারত ও বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত তাঁরই সৃষ্টি।
জগদীশ চন্দ্র বসু বিজ্ঞানী রচনা
বিবাহ ও ব্যক্তিগত জীবন
১৮৮৩ খ্রী:ঠাকুরবাড়িরই এক অধঃস্তন কর্মচারী বেনীমাধব রায়চৌধুরীর একাদশ বর্ষীয়া কন্যা ভবতারিনীর সাথে ২২ বছর বয়সে কবিগুরুর বিবাহ সম্পন্ন হয়। বিবাহের পর তাঁর স্ত্রী-এর নাম হয় মৃণালিনী দেবী, তাঁদের মোট পাঁচজন সন্তান হয়েছিল। তারা হলেন মাধুরীলতা, রথীন্দ্রনাথ, রেনুকা, মীরা, এবং শমীন্দ্রনাথ। এদের মধ্যে রেনুকা এবং শমীন্দ্রনাথের খুব অল্প বয়সেই মৃত্যু হয়।
উপসংহার
অবশেষে রবি-জীবনে এলো অস্তমিত হওয়ার লগ্ন। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দে ২২ শে শ্রাবণের (ইং ৭ই আগস্ট, ১৯৪১) ঘনঘোর বাদল দিনে এই মহাজীবন মরলোক ছেড়ে চললেন মহাপ্রস্থানের পথে। তিনি চলে গেলেন কিন্তু দেশ ও জাতির কাছে রেখে গেলেন অফুরন্ত ঐশ্বর্য ভাণ্ডার। সুন্দরের আরাধনা করতে গিয়ে তিনি মানবতাকে বিসর্জন দেননি। তিনি আধুনিক ভারতের নব তীর্থক্ষেত্র। এই তীর্থে এসেই জানা যায় ভারতকে।
FAQ:-
1. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা কত সালে জন্মগ্রহণ করেন?
১৩৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ শে বৈশাখ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জন্মগ্রহণ করেন।
2. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতা ও মাতার নাম কি?
তাঁর পিতা ছিলেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মা শ্রীমতি সারদা দেবী।
3. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদার নাম কি ছিল?
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদার নাম ছিল প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর
4. ২৫ বৈশাখ কি
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী স্মরণে পালিত হয় রবীন্দ্রনাথ জয়ন্তী।
আরও পড়ুনঃ