পরিবেশ রক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা PDF

ভূমিকা

আমরা যেখানে বাস করি, তার পারিপার্শ্বিক পরিমণ্ডলকেই বলা হয়, ‘পরিবেশ’। গাছ যেমন সজল মাটি, অবাধ আলো এবং উৎকৃষ্ট সার পেলে সতেজভাবে বেড়ে ওঠে, আমাদের বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠাটাও যেন ঠিক অনুরূপ। আমাদের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য চাই উৎকৃষ্ট পরিবেশ। স্বাস্থ্য-উজ্জ্বল পরমায়ুর জন্য সুস্থ পরিবেশের বড়ো প্রয়োজন। পরিবেশ ভালো না হলে, কেউ কী ভালো হতে পারে!

পরিবেশ দূষণ, নালানর্দমা, পচা খাবার ইত্যাদি

কিন্তু দুঃখের ব্যাপার এই যে, আমাদের বেঁচে থাকার জন্য ভালো পরিবেশের বড়ো অভাব। বেশির ভাগ সময়েই দেখা যায়, আমাদের ঘরের পাশেই নালানর্দমা। আমরা যে জল ব্যবহার করি, তার নিকাশি ব্যবস্থাও ঠিক নেই। ফলে, জল জমে এবং এই জমে থাকা জলে মশার জন্ম হয়। কেবল মশা নয়, আরও নানারকম দূষিত কীটপতঙ্গের আশ্রয় হয় এই জমে থাকা জলে। কলেরা প্রভৃতি নানান রোগের সৃষ্টি হয় এই পরিবেশে। তা কেবল জল জমা নয়, আমরা ঘরের পাশেই জমিয়ে তুলি নানাধরনের আবর্জনা। ছাঁই-পাঁশ, মাছের আঁশ, পচা খাবার, কাঁঠালের ভুঁতি, শালপাতা, খাবারের প্যাকেট ইত্যাদি জমিয়ে ঘরের পাশে তৈরি করি আবর্জনার পাহাড়। এই আবর্জনা হল দূষিত গন্ধের গন্ধমাদন। ভীষণ অস্বাস্থ্যকর। এরা হল নানান রোগের উৎস।

আলো বাতাস দরকার

বিশেষভাবে আলো এবং বাতাসের ওপর পরিবেশের উৎকর্ষ নির্ভর করে। আলোর অভাবে বাসগৃহগুলি অনেক সময় ভিজে ও স্যাঁতসেঁতে হয়ে থাকে। চারদিকের নোংরা আবহ পরিবেশকে করে তোলে অস্বাস্থ্যকর। এই ধরনের পরিবেশে যারা বাস করে, তারা সারা বছর ধরে নানা অসুখে ভোগে। কোনো ওষুধের ক্ষমতা নেই যে, তাদের নিরাময় করে তোলে। এই প্রেক্ষিতে বলা যায়, পরিবেশ উন্নয়নে আলো ও বাতাস খুবই জরুরি।

ভারসাম্যের সংকটকালীন অবস্থা

বর্তমানে বায়ু, জল, মাটি ভীষনভাবে দূষিত হচ্ছে । কল- কারখানার বিষাক্ত ধোয়া বাতাসে কার্বন -ডাই – অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইডের, পরিবেশের বিষাক্ত গ্যাসের পরিমাণ বাড়িয়ে তুলছে। কৃষিক্ষেত্রে বিষাক্ত সারের ব্যবহার, কল – কারখানার বর্জ্য পদার্থ দ্বারা জল দূষিত হচ্ছে। যানবাহনের বাজির শব্দ, শব্দ দূষণের মাত্রাকে তরান্বিত করছে। যার ফলে খরা, বন্যা বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হচ্ছে।

ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা

এখানে পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে যা বলা হল, তা অতিসামান্য। কিন্তু দঃখের ব্যাপার এই যে, বছরের পর বছর কেটে যাচ্ছে, কিন্তু এইসব দূষণ থেকে কোনো মুক্তি পাওয়া যাচ্ছে না। তাই আমাদের মনে হয়, এ ব্যাপারে ছাত্রছাত্রীদের কিছুটা এগিয়ে আসতে হবে। তারা এগিয়ে এলে একটি প্রতিকার পাওয়া যেতে পারে।

ছাত্রছাত্রীরা যা পারে

1.নিজের এলাকার আবর্জনা যাতে জমতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখা। যদিবা আবর্জনা জমাও হয় তবে তা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফাঁকা স্থানে পুড়িয়ে ফেলা

 2.জল দূষণ রোধ করতে নিজের এলাকায় ব্যবহৃত জলাশয়ে গবাদিপশুর স্নান ও পুকুর পাড়ে প্রাতঃকৃত্য বন্ধ করা|

3.রাস্তার ধারে বিদ্যালয় কিংবা পড়ে থাকা জমিতে বৃহ্ম – রোপন কর্মসূচী নেওয়া ও বন সংরক্ষন করা।

4.বে-আইনিভাবে গাছ কাটা বন্ধ করা

5.ইলেকট্রিক হর্ন বাজানো বন্ধ করা ।

সচেতনতার প্রসার ঘটানো

 বেতার, দূরদর্শন, চলচ্চিত্রের সাহায্য নিয়ে জল, বাতাস বিশুদ্ধ রাখার জন্য মানুষকে সচেতন করা সম্ভব৷ এছাড়া ছাত্রছাত্রীরা স্থানীয় এলাকায় পরিবেশ ভারসাম্যতা নিয়ে সভা ও পথ নাটিকার আয়োজন করতে পারে

উপসংহার

জীবনে সুস্থভাবে বাঁচার জন্য প্রয়োজন বিশুদ্ধ পরিবেশ। আজকের ছাত্রসমাজ ভবিষ্যতের সচেতন দায়িত্বশীল নাগরিক । সে কারণে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় তাদের সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে। পরিবেশ উন্নয়নে ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা যে কতখানি তা একালেও আমরা দেখতে পাবো।

আরও দেখুনঃ

বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ রচনা

বাংলার উৎসব রচনা

Leave a Comment