ভূমিকা
মানুষ তার অদম্য উৎসাহ,উদ্দীপনা ও উদ্ভাবনী শক্তির দ্বারা এক সময় প্রকৃতিকে জয় করে৷ কিন্তু মানুষের জয়ের নেশা থেমে থাকেনি৷ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে মানুষ অভিযান চালায় জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে। এর পাশাপাশি শাসকদের মধ্যে দেখা দেয় ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ও আধিপত্যবাদ৷ তারা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাধ্যমে আবিষ্কৃত সৃষ্টি সামগ্রী মানবকল্যাণে ব্যবহার না করে মানব সম্পদ ও সভ্যতা ধ্বংস করতে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়৷ এরই পরিপ্রেক্ষিতে সংঘটিত হয় পর পর দুটি বিশ্বযুদ্ধ। এ যুদ্ধের ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ পরিবেশের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে৷
বিশ্ব পরিবেশ দিবসের ইতিহাস
পরিবেশ দূষণের হাত থেকে রক্ষা করতে এবং তার ভারসাম্য বজায় রাখতে এই দিনের আয়োজন। ১৯৭২ সালের জুন মাসে সুইডেনের স্টকহোমে রাষ্ট্রসংঘের প্রথম মানবিক পরিবেশ সম্মেলন আয়োজিত হয়। ঐ সম্মেলনেই রাষ্ট্রসংঘের পরিবেশীয় কার্যক্রম শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওইয়া হয় রাষ্টসংঘের সাধারণ পরিষদে ৫ই জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসাবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তার দুই বছর পরে ১৯৭৪ সাল থেকে প্রত্যেক বছর দিনটি পালিত হয়ে আসছে।
দূষণের ভয়াবহতা
মানুষের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে মাটি-জল-বাতাস সবই আজ দূষিত৷ শিল্প-কারখানার বর্জ্য গ্যাস, পেট্রোল ইঞ্জিনের কালো ধোঁয়া, পারমাণবিক চুল্লির বিস্ফোরণ, পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা বা সামরিক মহড়া ইত্যাদি কারণে বিশ্ব পরিবেশ দিন দিন বিষাক্ত হতে চলেছে৷ এসব কারণে প্রতিবছর প্রায় ২০ কোটি টন কার্বন মনোক্সাইড সঞ্চিত হচ্ছে৷ বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইড, সালফার-ডাই-অক্সাইড ইত্যাদি গ্যাসের আনুপাতিক হার ক্রমশ বাড়ছে৷ ফলে বৃষ্টির জলে এসিডের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে এসিড বৃষ্টি হচ্ছে। এর প্রতিক্রিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষিজমি ও ফসল, ধ্বংস হচ্ছে সবুজ অরণ্য৷ সারা বিশ্বের মোট ৮০ শতাংশ ছিল গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অরণ্য৷ পরিবেশ বিজ্ঞানীদের হিসাব মতে গড়ে প্রতি মিনিটে ২০ হেক্টর অরণ্যের নাশ চলছে, প্রতিবছর মরুভূমি হচ্ছে ৭০ লক্ষ হেক্টর জমি৷ প্রকৃতি ও মনুষ্য সৃষ্টির কারণে ২০ কোটি হেক্টর কৃষিযোগ্য জমি অনাবাদীর আওতায় চলে গেছে৷ বনভূমি ধ্বংস, বিষাক্ত গ্যাসের কারণে বায়ুমণ্ডলের বিপুল পরিমাণ অক্সিজেন কমে গেছে৷ পরিবেশ দূষণের কারণে মানুষ ও উদ্ভিদজগতের পাশাপাশি প্রাণিজগতেও ব্যাপক ধ্বংস ডেকে এনেছে৷ বিজ্ঞানীদের ধারণা, মাত্র ৬০ বছরে ৭৬টি প্রজাতির প্রাণীর বিলুপ্তি ঘটেছে৷ দূষণের ভয়াবহতা আজ সর্বব্যাপী৷
বিশ্ব পরিবেশ দিবসের গুরুত্ব
জনগণকে সচেতন করে মনুষ্য বাসোপযোগী অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করা আজ অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে৷ আর বিশ্ব পরিবেশ দিবসের গুরুত্বও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরিবেশ দূষণের ভয়াবহতা সম্পর্কিত এ দিনটি তাই নিছক আনন্দ অনুষ্ঠানের দিন নয়৷ শুধু বক্তৃতা বা আলোচনাও এর একমাত্র লক্ষ্য নয়৷ প্রয়োজন দিনটির গুরুত্ব উপলব্ধি করা৷ আমাদেরকে পরিবেশ দূষণমুক্তির নতুন উপায় উদ্ভাবনে ব্রতী হতে হবে৷ এতে শুধু সরকারই নয়, দেশের সচেতন জনগণকেও এগিয়ে আসতে হবে৷ সমাজতান্ত্রিক দেশে সরকার ও জনগণ একসঙ্গে পরিবেশ রক্ষার কাজে হাত লাগিয়েছে৷ পরিবেশ দূষণ রোধ করতে ব্যাপক, সুচিন্তিত কর্মসূচি গ্রহণ ও তা কার্যকর করতে হবে। আজ ধনতান্ত্রিক, সমাজতান্ত্রিক, উন্নত, অনুন্নত সব দেশকেই সমবেত উদ্যোগে পরিবেশ রক্ষায় ব্রতী হতে হবে৷
বিশ্ব পরিবেশ দিবসের কর্মসূচি
জাতিসংঘ প্রতিবছর এই দিনটিতে পরিবেশ সম্পর্কে পৃথিবীর মানুষকে সজাগ হওয়ার ডাক দেয়৷ এ জন্যে দেশে দেশে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়৷ প্রতিবছরই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে অগণিত মানুষ মারা যাচ্ছে, নষ্ট হচ্ছে সম্পত্তি। ভূমিকম্প, অগ্নুৎপাত, খরা, বন্যা একের পর এক লেগেই রয়েছে৷ অবশ্য পরিবেশবিজ্ঞানীরাও থেমে নেই। তারা নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন,ধ্বংসের এই তান্ডব লীলার মাত্রা কিভাবে কমিয়ে আনা যায়৷ জাতিসংঘ ঘোষিত পরিবেশ দিবসের আলোচ্যসূচিতে দুর্যোগ কবলিত মানুষের জানমালের বিষয়টি যুক্ত হয়েছে৷ প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগাম সংবাদ দিয়ে সবাইকে সতর্ক করে দেয়ার উপরও গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে৷ পরিবেশ রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে।
উপসংহার
পরিশেষে বলা যায় যে, বিশ্ব পরিবেশ দিবস জাতীয় জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবছরই বিশ্ব পরিবেশ দিবসটি এসে বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়ে যায়৷ এই দিনে বিশ্বের মানুষ নতুন করে শপথ গ্রহণ করে৷ অনুভব করে পরিবেশ সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা৷ পরিকল্পিত কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পরিবেশ দূষণের ভয়াবহতা সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে সচেতন করে তোলার প্রচেষ্টা চালানো হয়৷ এ দিনে সকল দেশের মানুষ পৃথিবীকে বাসযোগ্য করার অঙ্গীকারে আবদ্ধ হয়৷ বিশ্বের অগণিত মানুষের সাথে আমাদেরও উচিত বিশ্ব পরিবেশের এ আন্দোলনে নিজেদের সম্পৃক্ত করা৷
আরও পড়ুনঃ