বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ রচনা একটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা তাই সুন্দর ভাবে রচনাটি বর্ণনা করা হল।
ভূমিকা
আধুনিক যুগ বিজ্ঞানের যুগ। বিজ্ঞানের অগ্রগতি মানব সভ্যতার অগ্রগতি ৷ মানুষের হিত সাধনের জন্যই বিজ্ঞানের সৃষ্টি। কিন্তু এত উন্নতি সত্ত্বেও সভ্যতার কপালে দুশ্চিন্তার কলঙ্করেখা । বিজ্ঞানের জয়যাত্রার মাঝে একদিকে সৃজন, অন্যদিকে ধ্বংস । মানুষ তাই “বিজ্ঞান অভিশাপ না আশীর্বাদ প্রশ্ন তুলেছে।
বিজ্ঞানের জন্ম ও শ্রম বিকাশ
বিজ্ঞানের জন্ম কেমন করে হলো? তা কোনও প্রাণীর মতো একটি মুহূর্তে লাভ করেনি। শতশত বছর ধরে অসংখ্য মানুষের চিন্তা ও কর্মের মধ্যদিয়ে তিলে তিলে এই বিজ্ঞানের জন্ম হয়েছে। সৃষ্টির উষা লগ্নে মানুষ ছিল গুহাবাসী। গভীর অরণ্যে, নদীতীরে ছিল মানুষের বাসস্থান। ভয়ঙ্করী প্রকৃতি বার বার মানুষকে হাতছানি দিয়ে ডাকত। গভীর অরণ্যে ঝড়- ঝঞ্জা, বদ্র-বিদ্যুৎ আর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মধ্যে মানুষকে বাঁচতে হবে নিরন্তর সংগ্রামের মধ্যে। মানুষ ছিল তখন প্রকৃতির হাতের ক্রীড়নক। সেদিন মানুষকে রক্ষা করতে স্বর্গ থেকে নেমে আসেননি কোন দেবতা। কিন্তু মানুষ যেদিন নিজ বুদ্ধি বলে পাথর ঘষে অস্ত্র তৈরি করে পশুদের আক্রমণ প্রতিহত করল, তারপর ভয়ঙ্কর প্রকৃতিকে বশে এনে আত্মরক্ষার চিন্তা করল সে দিনই বলা যায় জন্ম বিজ্ঞানের। মানুষ বিজ্ঞান-বুদ্ধির উপর নির্ভর করে শিখেছে আগুনের ব্যবহার, শিখেছে কৃষিকর্ম, বয়ন কর্ম আর রাস্তা নির্মাণ, ওই বিজ্ঞানের শক্তির নিসর্গ প্রকৃতি তথা আকাশে, স্থলে-জলে আধিপত্য বিস্তার করে। এভাবে মানুষ আপন প্রভাব ও আধিপত্য বিস্তার করে বিধাতার শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করল।
মানব জীবনে বিজ্ঞানের প্রভাব
মানুষের জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত বিজ্ঞানের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ট্রুথপেস্ট, ব্রাশ, ফ্যান, হিটার, গ্যাস, টেলিভিশন, যানবাহন এসব কিছুই বিজ্ঞানের দান। কৃষি ও শিল্প সব ক্ষেত্রেই বিজ্ঞানের প্রভাব ও প্রসার লক্ষ্য করা যায় ৷ যাতায়াতের সুবিধার জন্য আবিষ্কার হয়েছে বাস, ট্রাম, ট্রেন ইত্যদি যানবাহন । দূরাভাষ দূরকে করেছে নিকট।
অতিরিক্ত বিজ্ঞান নির্ভরতা
বর্তমান যন্ত্র সভ্যতার যুগে মানুষ দিন দিন পরিনত হচ্ছে যন্ত্রে মানুষ তার ছোটো ছোটো কাজের জন্য নির্ভরশীল যন্ত্রের ওপর । বস্তুত মানুষ যন্ত্রকে না, যন্ত্র মানুষকে পরিচালনা করছে ।মানুষ অতিরিক্ত বিজ্ঞান নির্ভর হয়ে পড়েছে। এই আতরিক্ত বিজ্ঞান নির্ভরতা মানুষকে বিজ্ঞানের দাসে পরিণত করেছে।
বিজ্ঞানের অভিশপ্ত দিক
বিজ্ঞান সভ্যতার এক কল্পময় অধ্যায় হল হিরোশিমা নাগাসাকির হত্যাকান্ড । উন্নত দেশগুলি আজ পারমাণু শক্তিতে বলীয়ান হয়ে ক্ষুদ্র দেশগুলির শোষন চালাচ্ছে। নিত্যনৈতীক সন্ত্রাসবাদের শিকার হচ্ছে মানুষ। যানবাহনের যানবাহনের ধোয়া, কারখানার বজ্র পদার্থ প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করছে।
বিজ্ঞানের অভিশাপ মুক্তি
বিজ্ঞানকে অভিশপ্ত করার জন্য দায়ী মানুষ স্বার্থান্বেষী, জ্ঞানপাপী মানুষের মধ্যে শুভবোধ জাগ্রত না হলে বিজ্ঞান বিপথে চালিত হবেই। এর জন্য প্রয়োজন মানুষের শুভবোধের জাগরণ। মানুষের কল্যানে বিজ্ঞান- কে নিয়োগ করতে হবে। বিজ্ঞান পরিচালককেও শুভ বোধ দ্বারা পরিচালিত হতে হবে। তবেই বিজ্ঞান হবে মানুষের কাছে আশীর্বাদ স্বরূপ
উপসংহার
মানুষ যদি মানুষ হয়, বিজ্ঞানকে যদি মানব কল্যা নের কাজে প্রয়োগ করতে পারে, তাহলে বিজ্ঞান হবে আশীর্বাদ আর যদি অমানুষ হয়ে ধ্বংসের কাজে প্রয়োগ করে তবে বিজ্ঞান হয়ে উঠবে অভিশাপ।
আরও পড়ুনঃ