একটি শীতের সকাল রচনা Class 2-12

ভূমিকা

ঋতুর যেমন ভিন্নতা, সকালেরও তেমনই ভিন্নতা। ঋতুর যেমন বৈচিত্র্য, সকালেরও তেমনই বৈচিত্র্য। ভিন্ন ঋতুর ভিন্ন সকাল। প্রত্যেকেরই স্বতন্ত্র সাজ। স্বতন্ত্র চরিত্র। আবার শীত ঋতুরই সব দিনের সকাল একরকম নয়। এখন শীতের মাঝামাঝি। প্রকৃতির এক উদাসী, বিষণ্ণ চেহারা। গাছে গাছে পাতা ঝরার ডাক। রোজ যেমন সকাল হয়, আজও তেমনই সকাল হয়েছে। কিন্তু আজকের সকালটা অন্য দিনের চেয়ে একটু আলাদা।

একটি দিনের সকাল

চোখে তখনও ঘুমের আবেশ। কত বেলা হয়েছে বোঝা যায় না।দরজা- জানালা সব বন্ধ। বিছানায় লেপের উষ্ণতা ছেড়ে বাইরে আসতে মন চায় না। আরও, কিছুক্ষণ শুয়ে থাকার আলসেমি ভর করে। এরই মধ্যে মা দুবার তাড়া লাগিয়েছে। রাস্তায় গাড়ি ঘোড়ার শব্দ। আজ রবিবার। তবু উঠতে হলো। আজকের ঠাণ্ডাটা আরও কনকনে। লেপের আরাম ছেড়ে উঠে পড়লাম। জানলা খুলে দিতেই মুঠো মুঠো হিমেল হাওয়া ঘরে ঢুকল। বাইরে কুয়াশার ঘন চাদর। দূরের জিনিস চোখে পড়ে না। রোদের তেজ ঝিম-ঝিম। বাইরে আসতেই শীত-বুড়ী আমার শরীর ছুঁয়ে চলে গেল। চাদর জড়িয়ে কলতলায় গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে নিলাম। জল নয়, যেনব রফ। গায়ে ঠাণ্ডার কামড়। এবার বারান্দায় এসে বসলাম। একটু পরে চা এলো৷

সকালের ছবি

ঘন কুয়াশা এখন একটু একটু করে ভাঙতে শুরু করেছে। উত্তুরে হাওয়া বইছে। কান্তি ঠাণ্ডাটা বেশ জাঁকিয়ে বসেছে। আস্তে আস্তে কুয়াশার চাদরটা সরে যাচ্ছে। রাস্তা ভিজে যাচ্ছে। এরই মধ্যে লোকজন যে যার কাজে চলেছে। সবার গায়েই চাদর, গরম পোশাক। সামান্য দূরে ল্যাম্প পোস্টের গায়ে একটা বাচ্চা ছেলে শীতে কাঁপছে। একটু রোদের জন্যে হা-পিত্যেশ করে অপেক্ষা করছে। গায়ে সাধারণ একটা জামা। চোখ সরিয়ে নিলাম । আকাশে সূর্য উঁকি মারল। রোদ ছড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু রোদে সেই ঝাঁঝ নেই। এবার বোঝা গেল অনেক বেলা হয়েছে। বারান্দা থেকে সামনের পার্ক দেখা যায়। সখানে গাছে গাছে এখন পাতা ঝরার খেলা শুরু হয়েছে। পার্কে ছেলে বুড়ো অনেকেই ঘোরাঘুরি করছে। পাখিরা উড়ে যাচ্ছে। শব্দ করছে। এরই মধ্যে মাইক বাজিয়ে হই- হুল্লোড় করতে করতে অনেকে চড়ুইভাতি করতে চলেছে। কোথাও ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, গাঁদা ফুল ফুটে আছে। কেউ চলেছে চিড়িয়াখানা। গায়ে নানা রঙের পোশাক। কেউ চলেছে ফুলকপি, পালং, টম্যাটো আরও নানা সবজির বোঝা মাথায় নিয়ে।

সকালের ভাবনা

এসব ছবি দেখতে দেখতে কখন যেন আনমনা হয়ে যাই। মনে মনে কত কথার মালা গেঁথে চলি। তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে শীতের গ্রামবাংলা। মাঠে মাঠে ধান কাটা হয়ে গেছে। কিষাণ চলেছে মাঠের পথে। মুগ, মুসুর, ছোলা, কলাই বোনার সময় যে বয়ে যায়। গাঁয়ের বধূ চলেছে ঘাটের পথে। শীতের খেজুর রসের গুড় তৈরির কাজ চলছে। আবার শহরে শীতের অন্য রঙ, অন্য সাজ। এখানে শীত আসে খুশির মেজাজ নিয়ে। শীতের মরশুমে শহরে খেলাধুলোর আসর বসে। শীত মানুষকে ঘরের বাইরে টেনে নিয়ে যায়। সার্কাসের তাঁবু পড়ে শহরের উত্তর-দক্ষিণে। চড়ুইভাতি হাতছানি দেয় । চিড়িয়াখানা ডাকে। শীত আসে শহরকে নতুন করে উজ্জীবিত করতে।

উপসংহার

শীতের সকাল আমার মনে এক বিচিত্র অনুভূতির সঞ্চার করে। সেই পাতা-ঝরা, কুয়াশামোড়া সকালের দিকে তাকিয়ে মন কেমন বিষণ্ণ হয়ে ওঠে। তখন শীতকে আমার এক উদাসী বাউল বলে মনে হয়। তার হাতে একতারা, সেখানে বৈরাগ্যের সুর। কিন্তু এটাই তার একমাত্র পরিচয় নয়। পরক্ষণেই মনে হয় শীতের সকাল আমাকে আরও এক প্রাণচঞ্চল জীবনের কথা বলে যায়। শীত এসে মানুষকে আরও আনন্দমুখর করে তোলে। শীতের সময়ই নানা মেলা, নানা পার্বণ। মানুষের মনে তখন খুশির ছোঁয়া। শীতের সকালের কাছে এ আমাদের বড়ো পাওনা।

আরও পড়ুনঃ

তোমার দেখা একটি মেলা রচনা

শীতকাল রচনা

Leave a Comment