ভূমিকা
গত শতকের প্রথমার্ধে তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমের এক প্রত্যন্ত গ্রামে এক মা তাঁর সাত ছেলেমেয়ের জন্য শুধু ভাত রাঁধতেন। কিন্তু ছোটো ছেলেটির জন্য তৈরি করতেন কয়েকটা রুটি, যাতে পড়ার সময় তার খিদে না পায়। নামমাত্র পুঁজি থেকে কিনতেন কেরোসিন তেল, যাতে ছেলেটির রাতের পড়ায় ব্যাঘাত না ঘটে। আর স্বপ্ন দেখতেন যে, তাঁদের বাড়ির কাছে আছে যে বঙ্গোপসাগর, সেই বিশাল সমুদ্রকেও ছাপিয়ে যাবে তাঁর ছেলেটির নামডাক। সমুদ্রের কোল ঘেঁষে ছোটো একটি গ্রামে লালিত সেই স্বপ্নেরই নাম আবুল পাকির জয়নুল আবদিন আবদুল কালাম ।
ছেলেবেলা ও শিক্ষা
কালামের জন্ম হয়েছিল রামেশ্বরমের এক অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারে। তাঁর বাবা জয়নুল আবদিন ছিলেন একজন সাধারণ মৎস্যজীবী। এই অভাবের সংসারে কালামকে স্কুলে পড়ার সময়ে কিছু অর্থ রোজগারের জন্য বাড়ি বাড়ি কাগজ বিক্রি করতে হত। রমানাথপুরম ম্যাট্রিকুলেশন স্কুল থেকে বিদ্যালয়শিক্ষা শেষ করে কালাম ভরতি হন তিরুচিরাপল্লির সেন্ট জোসেফ কলেজে। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে সেখান থেকে স্নাতক হয়ে তিনি যান চেন্নাইয়ে। | সেখানে মাদ্রাজ ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজিতে এয়ারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন।
কর্মজীবন
১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে আবদুল কালাম ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশনের অধীনস্থ অ্যারোনটিক্যাল ডেভেলপমেন্ট এস্টাবলিশমেন্টে একজন বিজ্ঞানী হিসেবে যোগ দেন। এই সময়ে তিনি ভারতের প্রবাদপ্রতিম মহাকাশবিজ্ঞানী বিক্রম সারাভাই, অধ্যাপক সতীশ ধাওয়ান প্রমুখের সান্নিধ্যে আসেন। ১৯৬৩-৬৪ খ্রিস্টাব্দে মাত্র একবারই কালাম গিয়েছিলেন মার্কিন মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসায়। ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে আবদুল কালাম যোগ দেন ইসরোতে। প্রথম ভারতীয় মহাকাল উৎক্ষেপণযান এসএলভি-র প্রকল্প আধিকারিক ছিলেন স্বয়ং কালাম। কৈশোরে বিমানচালক হওয়ার স্বপ্ন দেখা আবদুল কালাম হয়ে উঠেছিলেন ভারতের ‘মিসাইলম্যান’। অগ্নি, পৃথ্বী ইত্যাদি তাঁরই সফল সৃষ্টি। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত তিনি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য বিজ্ঞান বিষয়ক পরামর্শদাতা এবং প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (DRDO)-র সচিব। ভারতকে পরমাণু শক্তিধর দেশে পরিণত করেছিল যে পোখরান বিস্ফোরণ, তারও মূল কারিগর ছিলেন তিনিই।
নিরপেক্ষ মানসিকতা
আব্দুল কালাম ধর্মনিরপেক্ষ মানসিকতার অধিকারি ছিলেন। খুব অল্প বয়সে থেকেই তিনি ধর্মনিরপেক্ষ মনোভাবের পরিচয় দিয়েছেন। ছেলেবেলা থেকে তিনি মসজিদে নামাজ পড়ার পাশাপাশী হিন্দুদের মন্দিরে গিয়ে গান শুনতেন।
রাষ্ট্রপতি কালাম
২০০২ খ্রিস্টাব্দের ২৫ জুলাই পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য আবদুল কালাম ভারতের একাদশতম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। তিনি প্রথা ভেঙে রাষ্ট্রপতি ভবনের দরজা খুলে দিয়েছিলেন সকলের জন্য, বিশেষত বাচ্চাদের জন্য।
শিক্ষক কালাম
শুধু বিজ্ঞানী নন, কালাম ছিলেন আদর্শ শিক্ষকও। তাই রাষ্ট্রপতির মেয়ার করে কালাম ফিরে যান অধ্যাপনায়। শিলং, ইন্দোর এবং আমেদাবাদের ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট, ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র, বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়, আন্না বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি অধ্যাপক হিসেবে তিনি নিয়মিত পড়াতেন।
আব্দুল কালাম রচিত গ্রন্থসমূহ
তাঁর বৃচিত গ্রন্থগুলির মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য হল তাঁর আত্মজীবনীমূলক রচনা- “wings of fire”। এই গ্রন্থে তিনি নিজের ছেলেবেলার কথা অত্যন্ত সহজ ও আকর্ষনীয় ভাষায় আলোচনা করেছেন। এছাড়াও তাঁর রচিত বিখ্যাত কিছু গ্রন্থ হল – টার্নিং পয়েন্টস, ইসনাইটেড মাইন্ডস, ফোর্ড ইউর ফিউচার ইত্যাদি গ্রন্থ উল্লেখযোগ্য। তাঁর রচিত গ্রন্থগুলি আজও ভারতবর্ষের যুবসমাজকে বিশেষভাবে অনুপ্রানিত করে।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবনী
প্রাপ্তসম্মান ও পুরস্কারসমূহ
জীবনে নিজের একনিষ্ঠ কর্মের জন্য জীবদ্দশায় তিনি অসংখ্য পুরস্কার লাভ করেছেন। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য-রামানুজন পুরস্কার, বীর সাভারকর পুরস্কার, হুভার মেডেল, ইন্দিরা গান্ধী আওয়ার্ড ফর নেশনাল ইনট্রিগ্রেশন, ইত্যাদি। এছাড়া ১৯৮১ সালে তিনি পদ্মভূষন এবং ১৯৯০ সালে পদ্মবিভূষন এবং ১৯৯৭ সালে ভারতরত্ন পুরস্কার দ্বারা আদুল কালামকে সম্মানিত করা হয়।
উপসংহার
২০১৫ খ্রিস্টাব্দের ২৭ জুলাই শিলং- এ বক্তৃতা দিতে দিতেই জ্ঞান হারিয়ে এই বিখ্যাত মানুষটি চিরনিদ্রায় চলে যান। কালাম তাঁর বিজ্ঞানসাধনার দ্বারা দেশকে পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন আত্মবিশ্বাস ও শক্তির শিখরে। ভারতবর্ষ তার এই জ্ঞানী সন্তানের অভাব কখনোই পূরণ করতে পারবে না।
Download PDF
FAQ:-
1. এ পি জে আব্দুল কালাম পুরো নাম কি?
এ পি জে আব্দুল কালাম পুরো নাম আবুল পাকির জয়নুল আবদিন আবদুল কালাম।
2. আব্দুল কালাম এর বাবার নাম কি
আব্দুল কালাম এর বাবার নাম আবুল পাকির জয়নুল আবদিন।
3. এপিজে আবদুল কালামের মৃত্যু কত সালে?
২০১৫ খ্রিস্টাব্দের ২৭ জুলাই আবদুল কালামের মৃত্যু হয়।
আরও দেখুনঃ