ভূমিকা
সবুজে শ্যামলে ভরা আমাদের এদেশের বেশির ভাগ স্থানজুড়ে রয়েছে গ্রাম। আমাদের এ গ্রামগুলো যেন সবুজের লীলাভূমি। গ্রামের সবুজ প্রকৃতি যেকোনো মানুষের হৃদয়কে প্রশান্তিতে ভরে দেয়। গ্রামের শান্ত পরিবেশ মানুষের সকল ক্লান্তি দূর করে। গ্রামই এদেশের প্রাণ ।
গ্রামের অবস্থান
আমাদের গ্রামের নাম রতনপুর। এটি মেদনীপুর জেলার অন্তর্গত। এর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে কংসাবতি নদী। নদীর দুপাশের প্রাকৃতিক শোভা এ গ্রামকে অপূর্ব সৌন্দর্য দান করেছে। মেদনীপুর থেকে সড়ক পথে খুব সহজেই আমাদের গ্রামে আসা যায়।
গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য
আমাদের গ্রামখানি ছবির মতো। আম-জাম, কাঁঠাল-লিচু, নারিকেল-সুপারি, শিমুল-পলাশ, তাল-তমাল আর নানাজাতের গাছপালায় সুসজ্জিত আমাদের এই গ্রাম। ঝোপঝাড় লতাপাতার নিবিড় ঘনিষ্ঠতা সবার মন কেড়ে নেয়।পাখির কলকূজনে সব সময়ই মুখর থাকে গ্রামখানি। দিগন্তবিস্তৃত ফসলের মাঠ, ধান-কাউনের হাতছানি, নিঝুম দুপুরে বটের ছায়ায় রাখালের বাঁশি উদাস করে মনপ্রাণ । দিঘী-ডোবা, বিল-ঝিল- কী এক অপূর্ব সৌন্দর্যের সঞ্চয়।
গ্রামের মানুষ
আমাদের গ্রামে মুসলমান, হিন্দু ও খ্রিস্টান ধর্মের মানুষ বাস করে। তাদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক কোনো ভেদাভেদ নেই। প্রত্যেকেই প্রত্যেকের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই সব মানুষ এখানে সুখে-শান্তিতে বসবাস করে।
গ্রামের মানুষের জীবিকা
আমাদের গ্রামের বেশির ভাগ মানুষই কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত। এছাড়া কিছু জেলে এবং তাঁতিও এখানে রয়েছে। কিছু মানুষ লেখাপড়া শিখে শহরে চাকরি করে। তবে সে সংখ্যা নিতান্তই কম । এছাড়া কিছু মানুষ দিনমুজুরি করে জীবিকা নির্বাহ করে ।
গ্রামের অর্থনৈতিক উৎস
গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই কৃষির উপর নির্ভরশীল। তবে আমাদের গ্রামের চিত্র একটু ভিন্ন। গ্রামের বেশিরভাগ পরিবারেরই একজন করে গ্রামের বাইরে থাকে। তাদের পাঠানো মুদ্রা এ গ্রামের মানুষের আর্থিক অবস্থাকে মজবুত করেছে। গ্রামের আয়ের আরেকটি বড় উৎস কুটির শিল্প। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই নকশীকাঁথা, উলের তৈরি গালিচা, পাটের তৈরি নানা গৃহসজ্জার পণ্য তৈরি হয় । এগুলো শহরে বিক্রি করে গ্রামের মানুষ প্রচুর অর্থ আয় করে। এছাড়া কৃষিজাত পণ্য যেমন : ধান, পাট,
গ্রামের প্রতিষ্ঠান
আমাদের গ্রামে একটি প্রাথমিক ও একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। আরো রয়েছে একটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও দুটি বেসরকারি অফিস। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তিনটি মন্দির, একটি মসজিদ ও একটি গির্জা রয়েছে । গ্রামের শেষ প্রান্তে রয়েছে একটি পোস্ট অফিস।
গ্রামের সংস্কৃতি
সাংস্কৃতিকভাবে আমাদের গ্রাম খুবই উন্নত। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের পাশাপাশি এখানে নানা ধরনের মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালিত হয়। যেমন : চৈত্র মাসের শেষে চৈত্রসংক্রান্তির মেলা, বৈশাখ মাসে বৈশাখি মেলা, অঘ্রাণ মাসে নবান্ন অনুষ্ঠান, পৌষ মাসে পিঠার অনুষ্ঠান ইত্যাদি । গ্রামের মুসলিম ও হিন্দু বিয়েতে লোকজ গান, নাচ ও খাবারের আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন জাতীয় দিবসে স্কুলে অনুষ্ঠানের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবেও লোকজন নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে ।
উপসংহার
উভয় জাতি মিলেমিশে বাস করি। আমাদের গ্রামের মানুষ গুলো খুবই সহজ সরল। তারা একে অপরের সাথে ঝগড়া করেনা। একজনের বিপদে আরেকজন ছুটে আসে সহযোগিতার হাত নিয়ে। তাই আমাদের গ্রামের কোনো তুলনা হয়না। আমরা আমাদের গ্রামটি নিয়ে খুব গর্ববোধ করি।
FAQ :
1. গ্রাম বলতে কি বুঝায়?
কোন কিছুকে কেন্দ্র করে তার চারপাশে বসতি গড়ে উঠলে তাকে একটি গ্রাম বলে।
2. গ্রামের চেয়ে ছোট কোনটি?
গ্রামের চেয়ে ছোট বসতিকে হ্যামলেট বলা হয়।
3. মানুষ কেন শহরে চলে যায়?
কর্মসংস্থান ও ভালো শিক্ষা লাভের জন্য মানুষ গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে যায়।
আরও পড়ুনঃ