শীতকাল রচনা For Class 1-12

শীতকাল রচনা যে কোন ক্লাসের পরীক্ষায় এসে থাকে তাই খুব সুন্দর ভাবে শীতকাল সম্পর্কে সহজ ভাষায় শীতকাল রচনা বর্ণনা করা হল।

ভূমিকা

ভারতবর্ষ ষড়ঋতুর দেশ। ছয়টি ঋতুর মধ্যে শীত অন্যতম ঋতু। এ সময় চারদিক ঘন কুয়াশায় ঢাকা থাকে এবং প্রচন্ড শীত পড়ে। শীতকালে দিন ছোট ও রাত বড় হয়। বসন্ত ঋতুর আগে শীতের আগমন ঘটে। প্রকৃতিকে কুয়াশার চাদরে জড়িয়ে আবির্ভাব ঘটে শীতকালের। কবি লিখেছেন- “হিম হিম শীত শীত/শীত বুড়ি এলো রে, কনকনে ঠান্ডায় দম বুঝি গেলোরে “।

শীতকালের সময়সীমা

ছটিঋতুর মধ্যে পঞ্চম ঋতু হল শীত। পৌষ ও মাঘ এই মাস শীত ঋতু। ইংরাজী বর্ষপঞ্জী অনুসারে নভেম্বর-ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত শীত অনুভূত হয়ে থাকে।

শীতকালের বৈশিষ্ট্য

 শীতকাল প্রধানত শুষ্ক এবং দিনের তুলনায় রাত হয় দীর্ঘ, এসময় কুয়াশা ও শিশির পড়ে, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝি শীতকাল হলেও বাস্তবে নভেম্বর থেকেই হালকা শীত অনুভূত হয়। উত্তুরে হিমেল হাওয়া বইতে থাকে। ফলে শীতলতা বৃদ্ধি পায়। জানুয়ারী মাসের গড় তাপমাত্রা দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তর পূর্বাঞ্চলে ১৯ সেলসিয়াস থেকে শুরু করে উপকূলীয় অঞ্চলে ২০ – ২১° সেলসিয়াস পর্যন্ত বজায় থাকে। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ নগন্য এ সময়ে।

প্রাকৃতিক অবস্থা

শীতকালে উত্তর দিক থেকে ঠাণ্ডা শুষ্ক বাতাস বইতে থাকে। সূর্য এই সময় দক্ষিণ দিকে হেলে পড়ে। সূর্যের তাপ অনেক কমে যায়। এই সময় রাত্রে শিশির পড়ে। ভোরবেলা চারিদিক কুয়াশায় ঢেকে যায়। শীতকালে দিন ছোটো এবং রাত্রি বড়ো হয়। কোনো কোনো গাছের পাতা ঝরে যায়। গোলাপ, গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা এবং নানারকম মুরশুমি ফুলে চারদিক ভরে যায়।

উৎসব

 শীতকালের প্রধান উৎসব সরস্বতী পূজা। বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে এবং বাড়িতে এই পূজা হয়। এছাড়া আছে বড়োদিন, নবান্ন, পৌষ পার্বণ। বাড়িতে বাড়িতে চলে পিঠে পায়সের আয়োজন। ভ্রমণ এবং বনভোজনের উপযুক্ত সময় এই শীতকাল। শীতকালে সার্কাস ও নানারকম মেলা বসে।

শীতের সকাল

কুয়াশার চাদরে মোড়া শীতের সকাল হাড় হিম করা ঠান্ডা নিয়ে শুরু হয়। এ সময়ে এক ফালি রোদ সকলের কাছে বহুল প্রতীক্ষিত গ্রাম কিংবা শহর সব জায়গাতেই একটি ভিন্ন আমেজ তৈরী হয় এই শীতকালে। শীতের সকালে এক অজানা অলসতা ভর করে মানুষের মধ্যে। লেপ মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে থাকাতেই স্বর্গীয় সুখ অনুভূত হয়, গ্রামের মাঠে মাঠে শীতের কুয়াশা ভেদ করে চাষে নয়তো গবাদী পশুদের নিয়ে বের হয় কর্মঠ মানুষেরা অনেকে খড়কুটো জ্বেলে আগুন পোহায়, খেজুর রসসংগ্রহকারীরা বেরিয়ে পড়ে তাদের কাজে। আবার এই সময়ে পাহাড়ি এলাকাগুলি বরফাচ্ছন্ন হয়ে থাকে। সারারাত তুষারপাতের পর সকালের দৃশ্য সত্যিই মনোমুগ্ধকর।

শীতের উপকারিতা

 শীতকালে নানারকম শাক-সবজি জন্মায়। যেমন—পালং, মূলো, বিভিন্ন রকম কপি, টমেটো, বেগুন, পেঁয়াজ, আলু, শিম, মটরশুঁটি, বীট, গাজর ইত্যাদি। খেজুরের রস এবং খেজুর গুড় এই সময় পাওয়া যায় ৷ এই সময়ের প্রধান ফল কুল, কমলালেবু এবং নাসপাতি। শীতকালে মানুষের পরিশ্রম এবং হজম করার ক্ষমতা বাড়ে। এই ঋতুতে অসুখ-বিসুখও কম হয়।শীতকালীন মনোরম আবহাওয়াতে মানুষ বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যায়। চড়ুইভাতি করে। মানুষের ক্লান্তি কম হয় ফলে অনেক বেশি পরিশ্রমও করতে পারা যায়।

অপকারিতা

দরিদ্র মানুষ শীতের প্রয়োজনীয় পোশাক কিনতে পারে না । তারা শীতে খুব কষ্ট পায়। এই সময় হাত-পা ফেটে যায় ৷ অনেক বয়স্ক মানুষ শীতের তীব্রতা সহ্য করতে না পারার প্রাণহানি ঘটে,এসময় মশার উপদ্রব বাড়ে ডেঙ্গুর মত প্রাণঘাতী অসুখ ও ছড়ায় মারাত্মক ভাবে। শীতের শেষে বসন্ত রোগেরও প্রভাব দেখা যায়।

উপসংহার

বেশিরভাগ মানুষের কাছেই প্রিয় ঋতু হল শীত। শীত আসে আমাদের প্রকৃতিকে বদলে দিতে, নতুন করে প্রকৃতিকে সাজিয়ে দেওয়ার পূর্ব প্রস্তুতি হল শীত। শীতের রিক্ততা পুরানো পাতা ঝরিয়ে দিলেই নতুন পাতা নিয়ে আসে ঋতুরাজ বসন্ত। ধীরে ধীরে উত্তরের বাতাস কমে আসে। দিন বড়ো হতে থাকে। শীতের বিদায় নেওয়ার সময় এগিয়ে আসে।

FAQ :

1.শীতকাল সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত অনুচ্ছেদ কি ?

ছয়টি ঋতুর মধ্যে শীত অন্যতম ঋতু। পৌষ ও মাঘ এই মাস শীত ঋতু। এ সময় চারদিক ঘন কুয়াশায় ঢাকা থাকে এবং প্রচন্ড শীত পড়ে।

2.শীতকালে কি হয় ?

এ সময় চারদিক ঘন কুয়াশায় ঢাকা থাকে এবং প্রচন্ড শীত পড়ে। অনেক অঞ্চলে তুসারপাত হয়।

3.আমরা শীতকালকে কেন ভালবাসি ?

শীতকালে বিভিন্ন উৎসব পালিত হয়। ভ্রমণ এবং বনভোজনের উপযুক্ত সময় এই শীতকাল। তাই আমরা শীতকালকে ভালবাসি।

আরও পড়ুনঃ

বাঙালির প্রিয় উৎসব রচনা

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু রচনা

মাদার টেরেসার জীবনী

Leave a Comment