স্বামী বিবেকানন্দের রচনা Class 5-12 | Free PDF

স্বামী বিবেকানন্দ রচনা বাংলা

স্বামী বিবেকানন্দের রচনা স্কুলের যে কোন ক্লাসের পরীক্ষায় এসে থাকে তাই সুন্দর ভাবে স্বামী বিবেকানন্দ সম্পর্কে রচনা নিম্নে দেওয়া হল এবং সবশেষে Pdf প্রদান করা হল।

ভূমিকা

 “হে বীর, সাহস অবলম্বন করো, সদর্পে বল আমি ভারতবাসী, ভারতবাসী আমার ভাই” এই বাণী মৃতপ্রায় জাতিকে যিনি শুনিয়েছেন, তিনি ভারত আত্মার মূর্ত প্রতীক বীর সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দ। প্রেমের ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের প্রিয়তম শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দ ভারতের গৌরব সূর্য যার আলোকছটায় সমগ্র ভারত তথা পৃথিবী আলোকিত।

জন্মপরিচয়

স্বামী বিবেকানন্দ ১৮৬৩ সালে ১২ই জানুয়ারী উত্তর কলকাতার সিমলা পাড়ায় দত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন,তাঁর মাতা ছিলেন ভুবনেশ্বরী দেবী এবং পিতা বিশ্বনাথ দত্ত পেশায় একজন উকিল ছিলেন।

বাল্যকাল ও শিক্ষা

বিবেকানন্দের আসল নাম নরেন্দ্রনাথ দত্ত। ডাকনাম ছিল বিলে। ছোটোবেলায় নরেন খুব চঞ্চল ও দুরন্ত স্বভাবের ছিলেন, বিবেকানন্দ উত্তর কলকাতার সিমলা মেট্রোপলিটন স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এরপর স্কটিশচার্চ কলেজ থেকে দর্শন নিয়ে বিএ পরীক্ষায় পাশ করেন। এরপর আইন পড়ার সময় তাঁর পিতার মৃত্যু হওয়ায় তা আর শেষ করা হয়নি। ছোট থেকেই তাঁর বই পড়ার এক অদম্য নেশা ছিল, দর্শন, ধর্ম, ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান, শিল্পকশা ও সাহিত্য বিষয় ছিল তাঁর খুব প্রিয়, এছাড়াও বেদ, উপনিষদ, ভগবদ্গীতা, রামায়ন, মহাভারত, পুরান, সঙ্গীত, খেলাধুলাতেও ছিল তাঁর গভীর আগ্রহ।

শ্রীরামকৃষ্ণের সান্নিধ্যলাভ

প্রতিবেশী সুরেদ্ৰনাথ মিত্রের বাড়ি ধর্মমূলক গান গাইবার জন্য ডাক পেয়েছিলেন নরেন্দ্র নাথ আর সেখানেই হয়েছিল শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের সাথে তাঁর এথম সাক্ষাৎ, প্রথম দর্শনেই অভিভূত হয়ে পড়েছিলেন নরেন্দ্রনাথ। রামকৃষ্ণদেবের সান্নিধ্যে এসে নরেন ঈশ্বরমুখী হয়ে ওঠেন, ঠাকুর রামকৃষ্ণদেবের সন্ন্যাস ব্রতে দিক্ষা দিয়ে তাঁর নতুন নামকরণ করেন “স্বামী বিবেকানন্দ”।

কর্মজীবন ও আদর্শ

শ্রী রামকৃষ্ণদেবের তিরোধানের পর ভারত পথিক বিবেকানন্দ ভারত পর্যটনে বেরিয়ে পরিক্রমা করলেন হিমালয় থেকে কন্যাকুমারিকা। মিশলেন হিন্দু, মুসলিম, চণ্ডাল, সাধারণ মানুষের সঙ্গে অনুভব করলেন নিযাতিতা মানুষের হৃদয়ের যন্ত্রনা। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন”মানুষের মধ্যেই ভগবান বাস করেন” তাই তিনি বলেন – “জীবে প্রেম করে যেই জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর, ”তাঁর ধর্মসাধনার মূল কথা ছিল মানবমুক্তির সাধনা। তিনি বেদান্তের সমুদ্র মন্থন করে প্রচার করলেন বৈদান্তিক সা্ম্যবাদ, এই সামবাদ শ্রেণীহীন, বর্ণহীন  সমাজ প্রতিষ্ঠার সোপান। “সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই”।

স্বামীজির শিকাগো ভাষণ

১৮৯৩ খ্রী আমেরিকার শিকাগো শহরে মহাধর্ম সম্মেলনে বক্তৃতা দেবার জন্য আহ্বান পান। গেরুয়া পোশাক পরিধান ও সন্ন্যাসীর বেশে তিনি পৌঁছান শিকাগো শহরে ,ধর্মসভার মঞ্চে উঠে শ্রোতাবর্গকে সম্বোধন করেন – “আমেরিকাবাসী ভাই ও বোনেরা “মুহূর্তে উচ্ছ্বসিত করতালির ধ্বনিতে অভিনন্দিত হলেন পাচ্যের এই বীর সন্ন্যাসী। তিনি বলেন আধাত্মিকতা, পবিত্রতা কোন ধর্মসম্প্রদায়ের একচেটিয়া নয়, তিনি বলেন সামঞ্জস্য ও শান্তির কথা, প্রশংস্নসামুখর হন শ্রোতামণ্ডলিরা। এরপর স্বামীজি আমেরিকা ও ইংল্যান্ডের নানা স্থানে বেদান্ত দর্শন ব্যাখ্যা করে বেড়ান, অনেকেই তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। তার মধ্যে অন্যতম ছিলেন ভগিনী নিবেদিতা।

রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন প্রতিষ্ঠা

১৮৯৬ খ্রী: স্বদেশে ফিরে বিকোনদ পরমুখাপেমী পরানুকরণ-প্রিয় ভীরু ভারতবাসীকে নবজীবনের আদর্শে অনুপ্রানিত ও আত্মশক্তিতে বলীয়ান করার ব্রত নিয়ে গড়ে তুললেন একদল আদর্শ সন্ন্যাসী। ১৮৯৭ খ্রী প্রতিষ্ঠা করলেন মানবসেবার অন্যতম প্রতিষ্ঠান ”রামকৃষ্ণ মিশন” ১৮৯৯ খ্রী:- গঙ্গার পশ্চিমতীরে প্রতিষ্ঠা করেন পুন্য পীঠস্থান”বেলুড় মঠ” মানব সেবা, বেদান্ত দশন, এবং রামকৃষ্ণের শিক্ষা প্রচারই ছিল মিশন প্রতিস্থার মূল উদ্দেশ্য, দয়া নয় সেবার মধ্য দিয়ে তিনি ঈশ্বর প্রাপ্তির পথ দেখিয়েছিলেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচনা

সাহিত্যকীর্তি

শুধু কর্মজগৎই নয়, চিন্তা ও মননশীলতার ক্ষেত্রে স্বামীজি মানবতার বাণী প্রচার করে গেছেন। তাঁর রচিত গ্রন্থগুলি হল –“পরিব্রাজক”,”প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য”, “বর্তমান ভারত” প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য তিনি স্বপ্ন দেখতেন সমৃদ্ধ, শিক্ষিত, সংস্কারহীন ভারতবর্ষের, ভারতবর্ষই ছিল তার শৈশবের শিশুশয্যা, যৌবনের উপবন আর বার্ধক্যের বারানসী। তিনি বলতে শিখিয়েছেন – “ভারতবর্ষের প্রতিটি মানুষ আমার ভাই, আমার রক্ত। ভারতের কল্যান আমার কল্যাণ, ভারতের দীনতা আমার অপমান”।

উপসংহার

অত্যাধিক পরিশ্রম আর নিরলস কর্মসাধনায় স্বামীজির শরীর ভেঙে পড়ে। ১৯৫২ সালের ৪ঠা জুলাই মাত্র ৩৯ বছর বয়সে বেলুড় মঠে তিনি চিরনিদ্রায় অভিভূত হন। স্বামীজির জন্মদিবস সারা ভারতবর্ষে “জাতীয় যুব দিবস” হিসাবে পালিত হয়, বিবেকানন্দ ছিল জাতির গৌরব, সেবধিসের মূর্ত প্রতীক, যুবশক্তির কাছে মৃত সঞ্জীবনী মন্ত্র তাই স্বামী বিবেকানন্দই ভারত আত্মার জোতিময় বিগ্রহ, ছিলেন  নবযুগের প্রাণপুরুষ।

আরও পড়ুন-

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু রচনা

দূর্গাপূজা-বাংলা রচনা

ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপাল 

বাঙালির প্রিয় উৎসব রচনা

শীতকাল রচনা

গাছ আমাদের বন্ধু রচনা

Leave a Comment