ভগিনী নিবেদিতা রচনা Class 5-12

নমস্কার বন্ধুরা, আজ আমরা ভগিনী নিবেদিতা রচনা বর্ণনা করছি আশা রাখছি সবার ভালো লাগবে।

ভূমিকা

ভগিনী নিবেদিতা বা মার্গারেট এলিজাবেথ নোবেল ছিলেন একজন অ্যাংলো আইরিশ বংশোদ্ভুত সমাজকর্মী, লেখিকা, শিক্ষিকা এবং স্বামী বিবেকানন্দের শিষ্যা। ১৮৯৫ সালে লন্ডন শহরে তিনি স্বামী বিবেকানন্দের সাক্ষাত পান এবং ১৮৯৮ সালে তিনি ভারতে চলে আসেন। একই বছর ২৫শে মার্চ তিনি ব্রহ্মচর্য গ্রহণ করলে স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর নামকরণ করেন ‘নিবেদিতা’। স্বামী বিবেকানন্দের বাণী তাঁর জীবনে এতটাই গভীর প্রভাব বিস্তার করে যে, তিনি ভারতকে তাঁর কর্মক্ষেত্ররূপে বেছে নিয়েছিলেন। তিনিই প্রথম পাশ্চাত্য নারী যিনি ভারতীয় সন্ন্যাসিনীর ব্রত গ্রহণ করেছিলেন।

প্রাথমিক জীবন

১৮৬৭ সালের ২৮শে অক্টোবর উত্তর আয়ারল্যান্ডের ডানগ্যানন শহরে মার্গারেট এলিজাবেথ নোবেল জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম স্যামুয়েল রিচমন্ড নোবেল যিনি ছিলেন একজন ধর্মযাজক এবং তাঁর মাতার নাম মেরি ইসাবেলা। মাত্র দশ বছর বয়সে মার্গারেটের পিতা মারা যান। তারপর তাঁর দাদামশাই তথা আয়ারল্যান্ডের বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী হ্যামিলটন তাঁকে লালনপালন করেন। প্রাথমিক জীবনে তিনি লন্ডনের চার্চ বোর্ডিং স্কুলে পড়াশোনা করেছিলেন। এরপর হ্যালিফ্যাক্স কলেজে তিনি এবং তাঁর বোন মেরি পড়াশোনা করেছিলেন।

১৮৮৪ সালে, সতেরো বছর বয়সে শিক্ষা শেষ করে মার্গারেট শিক্ষিকার পেশা গ্রহণ করেন। দু’বছরের জন্য তিনি কেসুইকের একটি প্রাইভেট স্কুলে পড়ান। কিছুদিন পরে ১৮৯৫ সালে তিনি নিজেই উইম্বলডনে ‘রাস্কিন স্কুল” উদ্বোধন করেন। তিনি এই স্কুলে নতুন শিক্ষাপদ্ধতি ব্যবহার করেছিলেন। এর পাশাপাশি তিনি নানা পত্রপত্রিকায় প্রবন্ধ লিখতে থাকেন এবং চার্চের হয়ে নানা সেবামূলক কাজও শুরু করেন।

স্বামী বিবেকানন্দের সঙ্গে সাক্ষাত

১৮৯৫ সালের নভেম্বর মাসে লন্ডনের এক অভিজাত পরিবারের পারিবারিক আসরে মার্গারেট স্বামী বিবেকানন্দের বেদান্ত দর্শনের ব্যাখ্যা শোনেন। বিবেকানন্দের ধর্মব্যাখ্যা ও ব্যক্তিত্বে তিনি মুগ্ধ হন এবং অভিভূত হন। এরপর থেকে তিনি তাঁর প্রতিটি বক্তৃতা ও প্রশ্নোত্তরের ক্লাসে উপস্থিত থাকতেন। তারপর থেকেই তিনি স্বামী বিবেকানন্দকে নিজের গুরু বলে বরণ করে নেন। 

ভারতে আগমন

১৮৯৮ সালের ২৮শে জানুয়ারী স্বদেশ ও পরিবার পরিজন ত্যাগ করে মার্গারেট ভারতে চলে আসেন। এইসময় স্বামী বিবেকানন্দের কাছে ভারতের ইতিহাস, দর্শন, সাহিত্য, জনজীবন, সমাজতত্ত্ব, প্রাচীন ও আধুনিক মহাপুরষদের জীবনকথা শুনে মার্গারেট ভারতকে চিনে নেন৷ ভারতে আসার কয়েকদিন পর ১৭ই মার্চ শ্রীরামকৃষ্ণদেবের সহধর্মিনী সারদা দেবীর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাত হয় যিনি তাঁকে প্রথম সাক্ষাতে ‘খুকি” বলে সম্বোধন করেন। এরপর ২৫শে মার্চ স্বামী বিবেকানন্দ তাঁকে ব্রহ্মচর্য ব্রতে দীক্ষা দেন। তিনিই মার্গারেটের নতুন নাম রাখেন ‘নিবেদিতা”।

সমাজসেবা

মেয়েদের লেখাপড়া শেখানোর জন্য ভগিনী নিবেদিতা উত্তর কোলকাতার বাগবাজার অঞ্চলে ১৬ নম্বর বোসপাড়া লেনে নিজ বাসভবনে একটি বালিকা বিদ্যালয় খোলেন বর্তমানে যার নাম ‘রামকৃষ্ণ সারদা মিশন ভগিনী নিবেদিতা বালিকা বিদ্যালয়’। ১৮৯৯ সালে কোলকাতায় প্লেগ রোগ মহামারী আকার ধারণ করলে তিনি স্থানীয় যুবকদের সহায়তায় রোগীদের সেবাশুশ্রুষা শুরু করেন এবং পল্লী অঞ্চল পরিস্কারের কাজ করার কাজে নিয়োজিত হন।

জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে যোগদান

১৯০২ সালের ৪ঠা জুলাই নিবেদিতার গুরু স্বামী বিবেকানন্দের মৃত্যু হয়। এরপর তিনি ব্রিটিশ বিরোধী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে যোগ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। কিন্তু রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের নিয়মানুসারে ধর্ম ও রাজনীতির সংস্রব ঠেকাতে সংঘের কেউ রাজনীতিতে জড়াতে পারতেন না। তাই তাঁকে মিশনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক পরিত্যাগ করতে হয়। যদিও রামকৃষ্ণ মিশনের সন্ন্যাসীদের সঙ্গে তাঁর আমৃত্যু সুসম্পর্ক বজায় ছিল। এরপর ১৯০৫ সালে তিনি বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের সময় গোপনে বিপ্লবীদের সাহায্য করতে শুরু করেন।

সাহিত্যচর্চা

এইসময় ঋষি অরবিন্দ ঘোষ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং জগদীশচন্দ্র বসু প্রমুখ বিশিষ্ট ভারতীয় ব্যক্তিত্বের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ঘটে। এসবের পাশাপাশি তিনি মডার্ন রিভিউ, দ্য স্টেটসম্যান, অমৃতবাজার পত্রিকা, ডন, প্রবুদ্ধ ভারত, বালভারতী প্রভৃতি পত্রিকায় ধর্ম, সাহিত্য, রাজনীতি, সমাজতত্ত্ব, শিল্প ইত্যাদি বিষয়ে প্ৰবন্ধ লিখতেন। তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য বইগুলি হল ‘কালী দ্য মাদার’ ‘ওয়েব অফ ইন্ডিয়ান লাইফ”, ‘ক্রেডল টেলস অফ হিন্দুইজম’, ‘দ্য মাস্টার অ্যাজ আই শ হিম’ ইত্যাদি।

সম্মাননা

ভগিনী নিবেদিতা ভারতের সবচেয়ে প্রভাবশালী মহিলাদের মধ্যে অন্যতম। তাঁর বই ‘কালী দ্য মাদার’ পড়ে অনুপ্রাণিত হয়ে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘ভারতমাতা” ছবিটি আঁকেন। বিধাননগরে অবস্থিত পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের ২০১০ সালে নির্মিত ভবনটি ভগিনী নিবেদিতার নামে নামাঙ্কিত। তামিলনাড়ুর চেন্নাইতে তাঁর প্রতিষ্ঠিত অ্যাকাডেমিটির নাম রাখা হয়েছে ‘সিস্টার নিবেদিতা অ্যাকাডেমি” । এছাড়াও তাঁর নামে একাধিক বিদ্যালয় ও কলেজের নামকরণ করা হয়েছে। ১৯৬৮ সালে ভারত সরকার তাঁর স্মৃতিরক্ষার্থে একটি ডাকটিকিট প্রকাশ করেছিল।

জীবনাবসান

ভারতের গ্রীষ্মপ্রধান আবহাওয়ায় অতিরিক্ত পরিশ্রম করার ফলে কয়েক বছরের মধ্যেই ভগিনী নিবেদিতা অসুস্থ হয়ে পড়েন। অবশেষে ১৯১১ সালে হাওয়া বদলের জন্য আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু ও তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে দার্জিলিঙে বেড়াতে গিয়ে ১৩ই অক্টোবর সেখানেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৪৪ বছর।

আরও দেখুনঃ

সুকুমার রায় প্রবন্ধ রচনা 

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রবন্ধ রচনা

Leave a Comment