ভূমিকা
মানুষ প্রকৃতির সন্তান। মানবজীবনে প্রকৃতির কোনো বিকল্প নেই। প্রকৃতির মধ্যে মানুষ খুঁজে পায় অনাবিল শান্তি ও আনন্দের উপকরণ। আধুনিক যান্ত্রিক যুগে মুক্ত প্রকৃতির রূপ ও বৈচিত্র্য আস্বাদের জন্য মানুষ আজ ব্যাকুল। বৈচিত্র্য মানুষের জীবনের উপভোগ্যতাকে বাড়িয়ে দেয়। বৈচিত্র্য জীবনকে বর্ণময় করে তোলে। প্রকৃতি বাঙালির জীবনকে দিয়েছে রূপ ও রসের নানা ছন্দ। বছরের বারোমাস নতুন নতুন রূপ নিয়ে বাঙালির জীবনকে উদ্ভাসিত করে দেয়।
বিভিন্ন ঋতুর বৈশিষ্ট্য
বর্ষা ঋতুর ঠিক আগে বছর শুরু হয় গ্রীষ্মের খরতাপের মধ্য দিয়ে। আকাশ অকৃপণভাবে বাংলার মাটিকে দেয় প্রচণ্ড রৌদ্র ধারা। এই সময়ে বাঙালির প্রিয় ফলগুলি তার ফলনের প্রাচুর্য নিয়ে গাছ ভরিয়ে তোলে। আম, লিচু, জাম, কাঁঠাল, গ্রীষ্মের দাবদাহকে ভুলিয়ে দেয়। বর্ষাকালে কৃষকের জীবনে অবকাশ যায় কমে। কবি যতই বলুন বর্ষা অবকাশের ঋতু। কিন্তু গ্রাম জীবনে তখন ফসল ফলানোর পালা। বাংলার তৃতীয় ঋতু শরতের একটা আলাদা মাধুর্য এবং বৈচিত্র্য আছে। এসময়ে আকাশ ঘননীল। নদী ও জলাশয়গুলি জলে ভরা। কৃষকের ঘরে ঘরে উঠছে বাঙালির অর্থকরী ফসল পাট। শরৎকালে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবগুলি উদ্যাপিত হয়। তার মধ্যে দুর্গোৎসব অন্যতম। প্রকৃতির সঙ্গে এই উৎসবের মেলবন্ধন প্রতিটি বাঙালির হৃদয়কে স্পর্শ করে যায়। শীতের আগে হেমন্ত ঋতু বস্তুত পক্ষে বাংলার নিজস্ব সম্পদ। অন্য কোথাও এমন করে এই ঋতুটির উপস্থিতি বোঝা যায় না। এসময়ে কৃষকের ধান কাটা শেষ হয়ে যায়। শুরু হয়ে যায় চৈতালি ফসলের আয়োজন, শুকনো বাতাসে একটা মন্থরতা। হালকা শীতের আমেজ। কুয়াশা আর ঝরাপাতার খেলা মিলে হেমন্ত এক নতুন অনুভূতির সঞ্চার করে দেয়।
ঋতুবৈচিত্র্য ও অর্থনীতি
ঋতুবৈচিত্র্য ছয়টি ঋতুতে ভাগ করেছেন। প্রত্যেকটি ঋতুই তার আপন বৈশিষ্ট্যে স্বতন্ত্র ও সমুজ্জ্বল। দুটি মাস অন্তর অন্তর প্রাকৃতিক জীবনে ঋতুচক্র নিয়ে আসে তার আপন বৈচিত্র্য। প্রকৃতি বিজ্ঞানীরা প্রত্যেকটি বছরকে প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বাঙালির অর্থনৈতিক জীবনে ঋতুর আবর্তনের এক গভীর সম্পর্ক রয়েছে। ভারতবর্ষে যখন কৃষিসভ্যতা গড়ে উঠেছিল তখন আমাদের সবচেয়ে আকাঙ্ক্ষিত ছিল বর্ষার অকৃপণ বৃষ্টিধারা। তার ফলে প্রকৃতি অকৃপণ ভাবে আমাদের শস্যভাণ্ডার পূর্ণ করে দিত। বর্ষা ঋতুকে কেন্দ্র করে আমরা ঋতু পরিবর্তনগুলি বিশেষভাবে অনুভব করি।
ঋতু ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য
ঋতুচক্রের শেষ ঋতুটি বসন্ত। বসন্ত নামটির মধ্যে যেন এক রূপময় আনন্দ ধ্বনিত হয়ে ওঠে। প্রকৃতি গৈরিক শীতের অবসান ঘটিয়ে নানা বর্ণে সেজে ওঠে। শিমুল, পলাশ, কৃষ্মচূড়ার রঙের ছোঁয়ায় আকাশের চেহারা যায় বদলে। পাতার মর্মরে, বাতাসের ঘ্রাণে, সূর্যের উত্তাপে জীবন যেন মোহময় হয়ে ওঠে।
উপসংহার
ঋতুবৈচিত্র্য যেমন আনন্দ নিয়ে আসে তেমনি বাঙালির জীবনে কখনো কখনো দুঃখেরও কারণ ঘটায়। গ্রীষ্মের দাবদাহ যখন খরা হয়ে দেখা দেয়, বর্ষার ধারাবর্ষণ যখন ভয়ংকর প্লাবনের রূপ ধারণ করে তখন বাঙালির জীবনে সংকট নেমে আসে। জীবনে সুখ, দুঃখ দুই-ই থাকে। দুঃখকে অতিক্রম করে সুখের প্রতিষ্ঠাই হল ঋতুচক্রের বৈশিষ্ট।
আরও দেখুনঃ