দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও তার প্রতিকার বর্তমান সমাজের ভয়াভয় সমস্যা। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও তার প্রতিকার সম্পর্কে রচনা সুন্দর ভাবে বর্ণনা করা হল।
ভূমিকা
যে সমস্ত সামাজিক সংকটের মধ্যে পড়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে তার মধ্যে অন্যতম হল পণ্যমূল্যবৃদ্ধি— অস্বাভাবিক হারে জিনিসপত্র তথা দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিসের দাম বেড়ে যায়। নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত সমাজের লোকেদের পক্ষে দুবেলা দুমুঠো খাবার জোটানোর স্বাচ্ছন্দ্যটুকুও হারিয়ে যাচ্ছে এই পণ্যমূল্যের অকল্পনীয় বৃদ্ধিতে। একদিকে আকাশছোঁয়া দাম, অন্যদিকে জনগণের ক্রয়ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা এই দুয়ের সাঁড়াশি চাপে সাধারণ মানুষ ডুবে যাচ্ছে। পরিণামে ঘনিয়ে উঠেছে এক চরম সংকট, বেড়ে চলছে নিদারুণ জীবনযন্ত্রণা।
দ্রব্য বা পণ্য মূল্যবৃদ্ধির কারণ
ভারতবর্ষে যে-যে কারণে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি হয়েই চলেছে তার কারণগুলি হল—
১. এদেশে পরিকল্পনামাফিক রাজনীতিটাই হয়, কিন্তু মূল্যবৃদ্ধির হ্রাস নিয়ে সেভাবে পরিকল্পনা গঠিত হয় না।
২. সরকার ক্রমাগত ঘাটতি ব্যয়ের মধ্যে দিয়ে চলেছে।
৩. বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলির ঋণ সরবরাহের ফলে মুদ্রাস্ফীতির পরিমাণ ক্রমবৃদ্ধি।
৪. চাহিদা ও প্রাপ্তির মধ্যে অসম সম্পর্ক।
৫. অসাধু ব্যবসায়ীদের খাদ্যশস্য সঞ্চিত রাখা ও পাশাপাশি জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার রোধ না-হওয়া।
৬. ভোগ্যপণ্যের বাজার সম্প্রসারণ করবার বৌদ্ধিক কৌশল।
৭. মাঝে মাঝে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কবলে পড়ে যাওয়া (বন্যা, খরা ইত্যাদি)।
৮. কালোবাজারিদের রমরমা— রাজনৈতিক মদতপুষ্ট হয়ে তারা ধরাকে সরা জ্ঞান করে।
৯. করবৃদ্ধি ও জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়াটাও একটি পণ্যমূল্যবৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
ভারতের অর্থনীতি ও মূল্যবৃদ্ধি
অর্থনৈতিক সূত্র-অনুযায়ী বৃদ্ধি অর্থনৈতিক উন্নতির পক্ষে সহায়ক। কিন্তু ভারতীয় অর্থনীতিতে তা সম্ভব হচ্ছে না। যে সমস্ত পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে তা বাস্তবে রূপায়ণ করতে গিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে তার সমাধান করা হচ্ছে না। সুসংহত জাতীয় নীতির একেবারে বালাইটুকু নেই। সত্য গোপন করে আখের গোছানোর রাজনীতিতে সবাই মত্ত বলে জনসাধারণের ওপর থেকে পণ্যমূল্যবৃদ্ধির অভিশাপ কখনও কাটছে না। কোটি কোটি টাকা বিদেশি ঋণের ফাঁদে পড়েছে ভারত। আর তার সুদ দিতে হচ্ছে সাধারণ জনগণের। সুতরাং ঋণগ্রহণের অর্থনীতিতে দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি কখনোই কমবে না, একেবারে মুছে যাওয়া তো অসম্ভব কল্পনা ।
পণ্য মূল্যবৃদ্ধির ফল
সাধারণ থেকে অতিসাধারণ মানুষ দিনের পর দিন ঠিকমতো চাল-ডাল কিনতে না পেরে দুবেলা খেতে না পেরে প্রতিমুহূর্তে নিরন্নের মিছিলে পা মেলায়। দরিদ্র মানুষ বেশি করে রেশননির্ভর হয়ে পড়েছে। মাছ-মাংস খাওয়া তাদের কাছে স্বপ্নবিলাসে পরিণত। এর ফলে চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই-রাহাজানি প্রতিমুহূর্তে বেড়েই চলেছে। বিক্ষোভ মিছিলও লম্বা হচ্ছে দিনের পর দিন। দেশে আরও গরিবি বেড়ে চলেছে।
পণ্য মূল্যবৃদ্ধির প্রতিকারের উপায়
মূল্যপণ্য বৃদ্ধির প্রতিকার করতে গেল—
১.অত্যাবশ্যকীয় জিনিসের উৎপাদন বাড়াতে হবে।
২.যে সমস্ত কালোবাজারিরা কৃত্রিম অভাব সৃষ্টি করে বাজারদর অগ্নিমূল্য করে রাখে তাদের অবিলম্বে প্রতিহত করতে হবে।
৩.যে সমস্ত রাজনৈতিক নেতারা কালোবাজারিদের মদত দিয়ে চলে তাদের গ্রেফতার করলে মূল্যবৃদ্ধির প্রক্রিয়া ধাক্কা খাবে।
৪. আইন ও বিচারব্যবস্থার মধ্যে অপরাধীদের পালানোর মতো ফাঁক রাখলে চলবে না।
৫.সর্বোপরি সুষ্ঠু গণচেতনা ও সুষ্ঠু বণ্টনব্যবস্থার দ্বারা সকলের সমান অধিকার নীতি প্রয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।
উপসংহার
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির হার যেভাবে দ্রুত গতিতে ছুটছে তাতে এটি একটি জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। দেশে যদি বছরে পাঁচ থেকে সাত বার পেট্রোল, ডিজেল, রান্নার গ্যাসের দাম বাড়ে, সেই সঙ্গে পরিবহণ ব্যয়ও বৃদ্ধি পায় তাহলে মানুষের জীবন বিপর্যস্ত তো হবেই। আর মানুষ হল কোনো দেশের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। আর যদি এভাবে বিনষ্টের পথে এগোয় তাহলে জাতির বা রাষ্ট্রের মঙ্গল কখনোই সম্ভব নয়। তাই দ্রুত এর প্রতিকার করা সকলেরই একান্ত কাম্য হওয়া প্রয়োজন।
আরও দেখুনঃ