বাঙালির প্রিয় উৎসব রচনা
“বাঙালির প্রিয় উৎসব রচনা “এর কথা বললে প্রথমেই মনে আসে বাঙালীর শ্রেষ্ঠ উৎসব দূর্গাপূজার কথা।কথায় আছে “বাঙালীর বারো মাসে তেরো পার্বন” সত্যিই প্রায় সারা বছর জুড়েই বাঙালীর জীবন নানা প্রকার উৎসবের আলোয় মুখরিত হয়ে থাকে তার মধ্যে অন্যতম হল বাঙালীর “দূর্গোৎসব”তাই বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপূজা রচনা সম্পর্কে নীচে সুন্দর ভাবে আলোচনা করা হল।
দুর্গাপূজা রচনা
ভূমিকা
কথায় আছে “বাঙালীর বারো মাসে তেরো পার্বন” সত্যিই প্রায় সারা বছর জুড়েই বাঙালীর জীবন নানা প্রকার উৎসবের আলোয় মুখরিত হয়ে থাকে তার মধ্যে অন্যতম হল বাঙালীর “দূর্গোৎসব” শিশির ভেজা দুর্বা ঘাসে ঝরে পড়া শিউলি ফুলের গন্ধ আর তুলোর মত কাশফুলের দোলা বাংলার মাঠ, ঘাট, নদী, প্রান্তর জানান দেয় মায়ের আগমনী বার্তা, বাঙালীর দীর্ঘ এক বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটে মহালয়ার শুভ বন্দনাতে, ধনী-গরিব, নারী-পুরুষ, আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা নির্বিশেষে মিলন উৎসব হল এই দূর্গাপূজা, সমস্ত দেশ তথা পৃথিবীর কাছে দূর্গাপূজার রুপ অভাবনীয় এবং অভিনব।
পটভূমি
পুরাকালে রাজা সুরথ তার হারিয়ে যাওয়া সাম্রাজ্য ফিরে পাবার জন্য দেবী দুর্গার পূজা করেন বসন্তকালে। সেজন এই পূজাকে “বাসন্তি” পূজা বলা হয়, অন্যদিকে কৃতিবাসী রামায়ন অনুসারে শ্রী রামচন্দ্র শরৎকালে সীতা উদ্ধারের নিমিও লঙ্কাধিপতি রাবনের সাথে যুদ্ধের পূর্বে ১০৮টি নীলপদ্ম সহযোগে দেবী দর্গার পূজার আয়োজন করেছিলেন, শরৎকালে পূজার জন্য একে শারদীয়া বলা হয়, বাঙালীরা শী রামচন্দ্রের অকালবোধনকেই শারদোৎসব হিসাবে বেছে নিয়েছেন।
দূর্গাপূজার সময়কাল
সাধারণত আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠ থেকে দশম দিন পর্যন্ত শারদীয়া দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়, এই পাঁচটি দিন যথাক্রমে দূর্গাষষ্ঠী, দূর্গাসপ্তমী, মহাঅষ্টমী, মহানবমী, এবং বিজয়া দশমী বলা হয়
মহালয়া
দূর্গাপূজার আগে অমাবস্যায় পালিত হয় মহালয়া, এই দিন হিন্দুরা শাস্ত্র অনুসারে পূর্বপুরুষদের প্রতি তর্পণ করে থাকেন। এই দিন ভোর চারটে থেকে শুরু হয় রেডিওতে চণ্ডীপাঠ। এরপর দূরদর্শনে দেখা যায় মহালয়ার নাটকীয় রুপ।
দেবীর বর্ণনা
বাংলায় দেবী দুর্গার যে মূর্তিটি দেখা যায় তা পরিবার- সমন্বিতা বা সপরিবার দূর্গার মূর্তি। মধ্যস্থলে থাকেন দেবী দূর্গা সিংহবাহিনী ও মহিষাসুরমর্দিনী, তার মুকুটের উপরে শিবের ছোট মুখ। দেবীর দশটি হাত। দশ হাতে থাকে দশ প্রকার অস্ত্র এবং পদতলে থাকে অস্ত্রবিদ্ধ মহিষাসুর দেবীর দুইপাশে থাকে তার ছেলে মেয়েরা ডানপাশে থাকে দেবী লক্ষী ও তার বাহন পেঁচা এবং গণেশ তার বাহন ইঁদুর, বামপাশে থাকে সরস্বতী তার বাহন হাঁস এবং কার্ত্তিক তার বাহন ময়ূর।
পূজার বিবরণ
বাঙালিরা এই চারটি দিন চরমনিষ্ঠা আর সমারোহে পূজা সম্পন্ন করে। শাস্ত্র মেনে রীতিনীতি আচার পালন করা হয়, মহাষ্ঠীর দিন দেবীর বোধন হয়, সপ্তমীতে নবপত্রিকা স্নান, অষ্টমী কুমারী পূজা,অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণে হয় সন্ধিপূজা এবং দশমীর দিন হয় দেবীর বিসর্জন, পূজার দিনগুলিতে চণ্ডীপাঠ, মন্ত্রপাঠ, ধূপ, ধূনো, চন্দনের সুগন্ধির সাথে ঢাকের বাদি বাংলার পরিবেশকে আনন্দময় করে তোলে। খুশির জোয়ারে মেতে ওঠে সবাই।
দূর্গাপূজার বিস্তার
দূর্গাপূজা ভারত, বাংলাদেশ ও নেপাল সহ ভারতীয় উপমহাদেশ ও বিশ্বের একাধিক রাষ্ট্রে পালিত হয় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা, ঝাড়খণ্ড, অসম, বিহার, মণিপুর, ওড়িশা রাজ্যেও মহাসমারোহে দূর্গাপূজা পালিত হয়।
পূজার আনন্দ
পূজোর মাসখানেক আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় নতুন জামা, জুতো কেনার ধূম পূজোতে এঁকে অন্যকে নতুন জামা উপহার দেয়। সধবাদের মধ্যে আলতা, সিঁদুর বিনিময়ের প্রথা প্রাচীন। পূজার দিনগুলিতে প্রতিটি বাঙালী আনন্দে মেতে ওঠে, ছোটোরা ঢাকের তালে নাচে, চলে ধুনুচী নাচ, ভোগ বিতরণ, প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে সারা দিন-রাত ঘুরে ঘুরে ঠাকুর দেখা, খাওয়া দাওয়া চলতে থাকে দশমীর দিন সবার মন ভারাক্রান্ত হয়ে আসে। সিদুর খেলার পর হয় দেবীর বিসর্জন, আবার একটি বছরের অপেক্ষা। কোলাকুলি আর প্রনাম বিনিময়ের মাধ্যমে একে অপরকে বিজয়া দশমীর শুভেচ্ছা জানানো হয়।
উপসংহার
দূর্গাপূজা বাঙালীর শ্রেষ্ঠ উৎসব, ধনী-দরিদ্র, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল ভেদাভেদ দূরে সরিয়ে সবাই মিলেমিশে পরম আনন্দের মিলনক্ষেত্র ও প্রীতি ভালোবাসার বন্ধন হল দুর্গাপূজা।
আরও পড়ুনঃ