বাংলার উৎসব রচনা একটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা। স্কুলের পরীক্ষায় প্রায় এসে থাকে তাই নীচে সুন্দর ও সহজ সরল ভাষায় বাংলার উৎসব রচনা বর্ণনা করা হল।
ভূমিকা
বাঙালি উৎসবপ্রিয় জাতি। এই উৎসবপ্রিয়তার মূলে রয়েছে দীর্ঘদিনের লালিত সামাজিক, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও লৌকিক ঐতিহ্য। বহু বিপর্যয়ে বাংলা বারবার বিধ্বস্ত হয়েছে, কিন্তু উৎসবমুখর মিলনপ্রাঙ্গণটি কোনোদিন কলুষিত হয়নি। বারো মাসে তেরো পার্বণের বৈচিত্র্য বাঙালির ঐক্যভাবনা ও ভূমিকা সংহতিকে চিরকাল দৃঢ়শক্তি দান করে এসেছে। এই উৎসবের মধ্য দিয়ে বাঙালি তার পরম্পরার প্রকাশ ঘটিয়েছে। তাই বাঙালি জীবনে উৎসব পালনের সর্বজনীন আবেদনটি একটি বিস্তৃত মিলনক্ষেত্র রচনার সার্বিক অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
উৎসব কি?
উৎসব মানে আনন্দ-উচ্ছ্বাস, ভেদাভেদ নয়, উৎসব মানে বিবেক, প্রীতি, প্রেম, উৎসব মানে মনুষ্যত্ববোধের জাগরণ, প্রানশক্তির বৈচিত্র্যময় অভিব্যক্তি অর্থাৎ উৎসব বলতে সামাজিক, ধর্মীয় এবং ঐতিহ্যগত প্রেক্ষাপটে পালিত আনন্দ অনুষ্ঠানকে বোঝায় উৎসবের মাধ্যমে আমরা আনন্দ প্রকাশ এবং আনন্দ লাভ করে থাকি, তবে এ আনন্দ একার নয়, পারিবারিক, সামাজিক বা সাম্প্রদায়িক পরিমণ্ডলে উপায় হল উৎসব সকলের সম্মিলনে সুখ লাভের উপায় হল উৎসব।
প্রাচীন বাংলার উৎসব চিত্র
প্রাচীন বাংলার উৎসব ছিল আত্মিক আদান-প্রদানে সমৃদ্ধ। সকলের সহযোগিতায় সেই উৎসব হয়ে উঠত প্রাণের সামগ্রী। উৎসবে ছিল ব্যাপক সার্বজনীন ভাব। সেদিন একের উৎসব সহৃদয়তার গুণে হয়ে উঠত দশের উৎসব। উৎসবকলা সর্বাঙ্গসুন্দর হত সকলের সমবেত যত্ন, চেষ্টা, উৎসাহ আর আনন্দে। সেদিন দেনা-পাওনা, হিসাব-পত্রের সম্বন্ধ ছিল গৌণ। উৎসব বাড়িতে বিক্রেতারা পণ্যসামগ্রী নিয়ে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসত।
বাংলার প্রচলিত উৎসব চারভাগে বিন্যস্ত
ক.ধর্মীয় উৎসব, খ.ঋতু উৎসব, গ.সামাজিকউৎসব, ঘ.জাতীয় উৎসব। বাংলা নানা ধর্ম-সাধনার পীঠস্থান। এখানে হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-জৈন- খ্রিস্টান নানা ধর্মমতের মানুষের সহাবস্থান। সিদ্ধিদাতা গণেশ পূজো দিয়ে হয় বাঙালি হিন্দুর নববর্ষের সূচনা। তারপর একে একে চলে উৎসবের বিচিত্র মিছিল। দশহারা, রথযাত্রা, রাখীপূর্ণিমা, মনসা, বিশ্বকর্মা শেষ হতে না হতেই শুরু হয় আগমনী সঙ্গীত। আসে বাঙালি হিন্দুর শ্রেষ্ঠ শারদোৎসব। জ্যোৎস্না-প্লাবিত কোজাগরী শারদ পূর্ণিমায় বাঙালির ঘরে ঘরে উচ্চারিত হয় সম্পদের অধিষ্ঠাত্রী লক্ষ্মীদেবীর আবাহন মন্ত্র। পরবর্তী অমাবস্যা তিথিতে হয় মহাকালীর পুজো ও দীপাবলী উৎসব। সারি সারি প্রদীপের আলোয় আমরা অন্ধকার রাত্রিকে করে তুলি আলোকময়ী। কার্তিক-জগদ্ধাত্রী পুজোর পরে মাঘের শ্রীপঞ্চমী তিথিতে আসে হংসবাহনা, সর্বশুক্লা দেবী সরস্বতীর বন্দনা-লগ্ন। বছরের শেষ পর্বে হয় অন্নপূর্ণা পুজোর আয়োজন। এছাড়া আছে মুসলমান সমাজের মহরম, ঈদুজ্জোহা, ঈদ-উল-ফিতর; বৌদ্ধদের বুদ্ধ-পূর্ণিমা উৎসব, জৈনদের পরেশনাথ উৎসব, ব্রাহ্মদেব মাঘোৎসব, খ্রিস্টানদের বড়োদিন, ইস্টার স্যাটার-ডে, গুডফ্রাই-ডে ইত্যাদি।
বাংলার ঋতু উৎসব
বিভিন্ন ঋতুতে বাংলায় অনুষ্ঠিত হয় বর্ণময় উৎসব, বাংলার মত উৎসবগুলির মধে ককেটি ঋতু হল নবান্ন, পৌদান, মাঘাৎসব, দোলমাঞা, নবর্ষোৎসব প্রভৃতি। অগ্রহায়ণ মাসে বাংলার ঘরে ঘরে ‘নতুন ধান্যে’ নবান্ন উৎসবের ধুম লাগে। পৌষে পৌষ মেলা, পিঠে-পার্বণ উৎসব। রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতন বৃক্ষরোপন, বসন্তোৎসব, পৌষমেলা প্রভৃতি ঋতু উৎসব বিশেষগূরুত্ব সহকারে উযাপিত হয়।
সামাজিক উৎসব
বাংলার সমাজিক উৎসগুলি বৃহত্তর সমাজিক, ভাবনার পরিচায়ক। এই উৎসবগুলির মধ্যে এক সর্বজনীন ভাব লক্ষ্য করা যায়। বারব্রত, অন্নপ্রাশন, উপনয়ন, বারমাহাত্ম্য, জামাই ষষ্ঠী, ভ্রাতৃদ্বিতীয়া, বাল্যবন্ধন, বিবাহ, জন্মতিথি উপলক্ষে বাঙালি সমাজ আনন্দে মুখরিত হয়।
জাতীয় উৎসব
ধর্মীয়-উৎসব, ঋতু-উৎসব, সামাজিক-উৎসব ছাড়াও বাঙালি আরো এমন কতকগুলো উৎসব উদযাপন করে যেগুলো সর্বভারতীয় জাতীয়-উৎসব হিসেবে চিহ্নিত। এগুলো তার উৎসব তালিকায় নবাগত ৷ এদের মধ্যে প্রধান, পনেরোই আগস্ট—ভারতের স্বাধীনতা-দিবস, ছাব্বিশে জানুয়ারি–ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস। তাছাড়া পঁচিশে বৈশাখ রবীন্দ্র-জন্মদিন। তেইশে জানুয়ারি নেতাজি সুভাষচন্দ্রের জন্মদিন উৎসবও সর্বভারতীয় মর্যাদা লাভ করেছে।
উপসংহার
বাংলা তথা বাঙালীর জীবন বাঙালীর জীবন যাপনের, প্রতিটি মুহূর্তে যেন বয়ে চলেছে উৎসবের ধারা। এই উৎসবের মধ্য দিয়ে বাংলা তার সংস্কৃতিকে তুলে ধরেছে সারা বিশ্বের দরবারে। বর্তমানে বাংলার এই উৎসবের যতই আধুনিকীকরণ হোক না কেন , আজও বাঙালী সেই প্রাচীন পন্থাগুলিকে অনুসরণ করে চলেছে। বারংবার বাংলার বুকে নেমে এসেছে দূযোগ, দুর্ভিক্ষ, মহামারী, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব আরো কত কি? তবু বাঙালীর এই উৎসব কখনোই থেমে থাকে নি। তারা নিজের স্বছন্দতাকে এবং ধারাবাহিকতাকে বজায় রেখেছে।
বাংলার উৎসব রচনা ৪০০ শব্দ
ভূমিকা
কথায় আছে “বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বন”। উৎসব ও প্রাণের দিনগুলোতেই বাঙালির আাগের প্রকৃত পরিচয় ফুটে ওঠে। বিভিন্ন ধর্মের মানুষ মিলেমিশে বছর জুড়ে তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান গুলি পালন করেন। বছরের প্রথম দিন শুভ নববর্ষ দিয়ে বাংলার উৎসব শুরু হয়।
উৎসব কি?
উৎসব মানে আনন্দ-উচ্ছ্বাস, ভেদাভেদ নয়, উৎসব মানে বিবেক, প্রীতি, প্রেম, উৎসব মানে মনুষ্যত্ববোধের জাগরণ, প্রানশক্তির বৈচিত্র্যময় অভিব্যক্তি অর্থাৎ উৎসব বলতে সামাজিক, ধর্মীয় এবং ঐতিহ্যগত প্রেক্ষাপটে পালিত আনন্দ অনুষ্ঠানকে বোঝায়।
উৎসবের প্রয়োজনীয়তা
মানবসমাজে উৎসবের মূল লক্ষ্য হল মানুষের সঙ্গে মানুষের আনন্দময় আত্মিক মিলন, উৎসব মানবজীবনকে পূর্ণতা দেয়, সংকীর্ণতা দূর করে, মূল্যবোধের প্রসার ঘটায়, তার মধ্যে মনুষ্যত্বের চেতনাকে জাগ্রত করে।
উৎসবের শ্রেনীবিভাগ
ধর্ম, ধাতু, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ইত্যাদি নানা বিষয়কে অবলম্বন করে বাংলার উৎসবের আয়োজন করা হয়। বাংলার উৎসবগুলিকে মূলত ধর্মীয় উৎসব, জাতীয় উৎসব, ঋতু উৎসব, সামাজিক উৎসব নামে বিভাজন করা হয়ে থাকে, তবে রাষ্ট্রীয় উৎসবের অনেকগুলিই এখন জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে আবার সামাজিক উৎসবগুলি এখন অনেকগুলিই পারিবারিক উৎসবে রুপান্তরিত হয়েছে। ধর্মীয় উৎসব; হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান ইত্যাদি নানা ধর্মাবলম্বী মানুষ বাংলায় বসবাস করে। প্রত্যেক ধর্মাবলম্বী মানুষ এখানে তার নিজের ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী নিজ নিজ ধর্মীয় উৎসব পালন করে। বাঙালি সমাজে হিন্দু উৎসব বেশি প্রাধান্য পায়। সাধারণত নববর্ষের শুরুতে লক্ষ্মী গণেশ বন্দনা করে ধর্মীয় উৎসবের যাত্রা শুরু হয়। তারপরে চলে উৎসব মিছিল। রথযাত্রা, দশহারা, বিশ্বকর্মা পূজা, মনসা পূজা, রাখি পূর্ণিমা, জন্মাষ্টমি, গনেশ পূজা, দুর্গাপূজা, ইত্যাদি।
উপসংহার
বাংলা তথা বাঙালীর জীবন বাঙালীর জীবন যাপনের, প্রতিটি মুহূর্তে যেন বয়ে চলেছে উৎসবের ধারা। এই উৎসবের মধ্য দিয়ে বাংলা তার সংস্কৃতিকে তুলে ধরেছে সারা বিশ্বের দরবারে। বর্তমানে বাংলার এই উৎসবের যতই আধুনিকীকরণ হোক না কেন , আজও বাঙালী সেই প্রাচীন পন্থাগুলিকে অনুসরণ করে চলেছে।
আরও পড়ুনঃ